দেড় বছরের আগ্রাসনে শুধু ফিলিস্তিনি শিশুদের দেহই নয়, ছিন্নভিন্ন হয়েছে পুরো গাজা, ফিলিস্তিনের হৃৎপিণ্ড। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানানো এই নির্মমতার উৎস কী? বুঝতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিনি যুবক হামজাহ সাদাহ।
অনলাইনে শতাধিক ইহুদিবাদী ইসরাইলির কাছে জানতে চেয়েছিলেন গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা তারা সমর্থন করেন কি না। উত্তর শুনে হামজাহর মতোই হতবাক নেটিজেনরাও।
অনলাইনে একজন ইসরাইলি বলেন, ‘গাজার মানুষের মরা দরকার। আমি দুইজন ফিলিস্তিনিকে মেরেছি। আমি সেনাবাহিনীতে আছি। দুইজনকে গুলি করেছি।’
আরেকজন বলেন, ‘গাজায় তো মানুষ নেই। সব পশু। বানর, কুকুর, ঘোড়া- এসবের মতোই একদল পশু। এগুলো মরলে সমস্যা নেই। ওগুলো মানুষ নয়।’
হামজাহ তাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি মুরগি খাও? তুমি কি গাজার একটা বাচ্চাকে খেতে পারবে? তুমি গাজার মানুষকে মুরগির সাথে তুলনা করছ?’
উত্তরে ঐ যুবক বলেন, ‘হ্যাঁ। মুরগিই। আর কিছু না। এগুলো মানুষ না। এগুলো পশু।’
হামজাহ তাকে আবারো বলেন, ‘ওরা আমার পরিবার। আমি ফিলিস্তিনি। আমার পরিবার আর বন্ধুরা গাজায় আছে। আমি ফিলিস্তিন থেকে এসেছি। এর মানে আমি পশু?’
যুবক বলেন, ‘হ্যাঁ। যদি তুমি ফিলিস্তিনের হয়ে থাকো, তাহলে পশু, তুমি মুরগি।’
নিছক কল্পনার ওপর দাঁড়িয়ে গাজা, ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিনিদের নিয়ে ইসরাইলি অপপ্রচার। কিন্তু ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোতে লাখো মানুষ মানসিকভাবে বন্দি এসব অপপ্রচারে। তারই প্রমাণ হাস্যোজ্জ্বল মুখে গর্বের সাথে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার এসব সাক্ষ্য।
নিজেদেরই ভূমিতে অসহায় ফিলিস্তিনিদের কারাবন্দি, নির্মম নিপীড়নের এ জীবন কয়েক দশকের। বর্বরতার সীমা ছাড়াতে ছাড়াতে অবশেষে মুখোশ খুলতে শুরু করেছে দখলদার ইসরাইলের। যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট, ঔপনিবেশিক কায়দায় ইসরাইলের ভূমি দখল কর্মসূচির পর্দা উন্মোচন হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে।
ইসরাইলের আগ্রাসন বিরোধী একজন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আর গায়ের জোরে সব আদায়কারীদের স্বার্থ রক্ষায় যে বিশ্ব তৈরির চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে একজোট হতে হবে বলে মনে করি আমি।’
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণে ১৯৬৭ সাল থেকেই পানির মতো অর্থ ঢেলেছে প্রতিটি ভূমিদস্যু সরকার। তারও আগে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর ইসরাইলের দখলকৃত অঞ্চল থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি, অঞ্চলটির ৮৫ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী, আশ্রয় নেয় আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
পরবর্তীতে মাতৃভূমিতে যাদের আর ফিরতে দেয়া হয়নি। নিজ দেশে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ মানুষের মতোই ফিলিস্তিনিদের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি খারিজ করেই ক্ষান্ত হয়নি ইহুদিবাদী ইসরাইলিরা, সীমা ছাড়িয়েছে পাশবিকতার।
একজন ফিলিস্তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহু মানসিকভাবে অসুস্থ। আমাদের রক্তের ওপর বেঁচে আছে সে। সে পানির মতো আমাদের, ফিলিস্তিনিদের রক্ত পান করে।’
গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেমে শুধু অঞ্চলের পর অঞ্চলে অবরোধ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কুক্ষিগত করেছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জীবনও।
দখলকৃত অঞ্চল নিজেদের দাবি করার মধ্য দিয়ে শুরু ইসরাইলের বসতি স্থাপন কর্মসূচি। এ লক্ষ্য অর্জনে শুধু ফিলিস্তিনি মুসলিমরাই নয়, ইসরাইলের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরাও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যোদ্ধাদের নির্মূলের নামে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী অভিযান জোরদার করে ইসরাইল।
ইসরাইলের এ পথে বড় বাধা গাজায় বসবাসরত খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। কারণ, ইসলামপন্থিরা এ যুদ্ধ শুরু করেছে বলে যে অপপ্রচার, ইহুদিদের হত্যাকারী হিসেবে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে চিত্রায়িত করার যে অপচেষ্টা ইসরাইল চালিয়ে আসছে শুরু থেকে, সে গল্পকে মিথ্যা প্রমাণ করে গাজায় মুসলিম-খ্রিস্টানসহ নানা বিশ্বাসে বিশ্বাসী ফিলিস্তিনিদের সহাবস্থান।
গাজায় চলমান আগ্রাসনের পেছনে ইসরাইলের প্রধান যুক্তি ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলা ও এক হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যার প্রতিশোধ।
হামাসের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও এর দুই সপ্তাহ আগেই টানা তৃতীয় দিন অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে বিমান হামলা চালায় খোদ ইসরাইল।