ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার তথ্য ফাঁস, ভয়াবহ বিপর্যয়ে পেন্টাগন

ওয়াশিংটনে পেন্টাগনের কার্যালয়
বিদেশে এখন
0

ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার গোপন কথোপকথন দ্বিতীয়বারের মতো ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় গোটা যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্ন উঠেছে, সংবেদনশীল তথ্য আদান প্রদানে এতো অনিরাপদ মেসেজিং সিস্টেম পেন্টাগন কেন ব্যবহার করছে। যদিও, পেন্টাগনের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের এজেন্ডা যেন বাস্তবায়ন না হয়, সেলক্ষ্যে এসব কাজ করছে একটি গোষ্ঠী। অন্যদিকে, তথ্য ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পেন্টাগন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে, যা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন নতুন নেতৃত্ব।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধাদের পৃথিবীতেই জাহান্নাম দেখিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে যুক্তরাষ্ট্র। লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় মার্কিন ও ইসরাইলি জাহাজ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের ওপর চড়াও হয় মার্কিন সেনাবাহিনী। দফায় দফায় চালানো হয় বিমান হামলা। কিন্তু একবার নয়, পরপর দুইবার স্পর্শকাতর ওই হামলার ছক কষার কথোপকথন ফাঁস হয়ে যায়।

এবার ফাঁস হয়েছে স্ত্রী, ভাই ও ব্যক্তিগত আইনজীবীর সঙ্গে ইয়েমেনে মার্চের হামলা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের কথোপকথন। এ ঘটনায় পিট হেগসেথের ব্যবহার করা অনিরাপদ মেসেজিং সিস্টেম নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। কেনই বা অনিরাপদ এমন সিস্টেমে এতো স্পর্শকাতর তথ্যের আদান প্রদান হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে।

মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, দ্বিতীয়বারের মতো ফাঁস হওয়া কথোপকথনে ছিল ইয়েমেনকে টার্গেট করে এফ/এ এইটিন হরনেটের ফ্লাইট শিডিউল। অথচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগেই পরিবারের সদস্য আর সহকর্মীদের সঙ্গে এই আলোচনা করেন তিনি। হেগসেথের ভাই ফিল আর ব্যক্তিগত আইনজীবী টিম পার্লাটোর প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত, কিন্তু স্ত্রী জেনিফার ফক্স নিউজের সাবেক কর্মী। যদিও সামরিক বাহিনীর স্পর্শকাতর বৈঠকেও তার উপস্থিতি ছিল বলে দাবি করেছে মার্কিন গণমাধ্যম।

যদিও পেন্টাগনের দাবি, ট্রাম্পের গণমাধ্যমকে সহ্য করতে না পারা আর গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের কারণে মিডিয়াগুলো এভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে এই গণমাধ্যমগুলোই বড় বাঁধা। সিগন্যালের চ্যাটে কোন স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বলেও দাবি পেন্টাগনের।

এর আগে ইয়েমেনে হামলার প্রথম পরিকল্পনা ফাঁস হয় সিগন্যাল গ্রুপের প্রথম চ্যাটে, যেখানে পিট হেগসেথ, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ ছিলেন। পেন্টাগন সেই বিষয়ে এখনও অনুসন্ধান করছে। এই ঘটনায় সাবেক প্রেস সচিব জন উলিয়তকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে পেন্টাগনের অবস্থা ভয়াবহ।

সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পুরো মাস পেন্টাগনে বিশৃঙ্খলা ছিল। স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস, গণহারে কর্মী ছাঁটাই, প্রেসিডেন্টের মনোযোগ নষ্ট করছে। এই মন্ত্রণালয়ের যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। এই ইস্যুতে ছাঁটাই হয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের আরও চার সদস্য। এরমধ্যে দুইজন ইরাক আর আফগানিস্তান যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত।

এর আগে ব্যক্তিগত মেসেজিং গ্রুপ সিগন্যাল চ্যাটে ইয়েমেনে হামলার তথ্য ফাঁস করেন দ্য আটলান্টিকের সাংবাদিক জেফারি গোল্ডবার্গ। ফাঁস হয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধ, পানামা খাল আর মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনা। এরপরও এই মেসেজিং সিস্টেম নিয়ে কোন ধরনের সতর্কতা দেখাননি পিট হেগসেথ। উল্টো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকেও। অবিশ্বাস করছেন সহকর্মীদের। পেন্টাগনে গণ ছাঁটাই আর নতুন নিয়োগে এতো অস্থিতিশীলতা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, এ ঘটনায় পিট হেগসেথকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাদের অভিযোগ, পিট অনেক মানুষের জীবন হুমকিতে ফেললেও, ট্রাম্পের তাকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা নেই। এখনও তিনি কিভাবে দায়িত্বে আছেন, এই প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

এএইচ