এক টুকরো রুটির জন্য গাজাবাসীর হাহাকার

খাবারের সন্ধানে শিশুসহ ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা
বিদেশে এখন
0

মানবতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে গাজার অবস্থা। এক টুকরো রুটির জন্য হাহাকার করছে গাজাবাসী। ফিলিস্তিনিদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরাইলি অবরোধ ও ক্রমাগত হামলায় গাজা উপত্যকা এখন নরকে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলিদের হামলার মুখে ত্রাণ বিতরণও সম্ভব হচ্ছে না। এটিকে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এদিকে, গাজায় ৯ সন্তান হারানোর পর তাদের বাবাও এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।

গাজা উপত্যকায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা। অনাহারে ও অপুষ্টিতে মরতে বসেছে গাজার হাজার হাজার নারী ও শিশু। গাজায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শ' ট্রাক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সেখানে গেল এক সপ্তাহে প্রবেশ করেছে মাত্র ৩০৫টি ট্রাক। তবে এসব ট্রাকে নেই শিশুদের খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী।

ইসরাইলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলায় গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের আশেপাশের আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্য সংকটে তাদের বেঁচে থাকা এখন দায়। একটি ট্রাক প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে হামলে পড়ছে সবাই। সারাদিনে কারও ভাগ্যে জুটছে কেবল একটি মাত্র রুটি।

এক অধিবাসী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মাত্র ২০টি রুটি পাই। যা দিয়ে আমার পরিবারে পাঁচজন লোকের তিনবেলা চলতে হয়। যে পরিমাণ সাহায্য আসছে তা খুবই কম। কেউ কেউ একবেলাও খাবার পাচ্ছে না।’

আরেকজন বলেন, ‘এখানে সবাই অনাহারে আছে। গেল তিন মাসে আমরা তেমন কিছুই পাইনি। এখন যা দেয়া হচ্ছে তা পরিমাণে খুবই কম।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমাদের শিশুরা খাবারের অভাবে এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা উঠে হাঁটতেও পারে না। ইসরাইলিদের এই অবিচার বন্ধ করতে হবে।’

গাজার এ পরিস্থিতিকে নিষ্ঠুরতম বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একদিকে সহায়তা প্রবেশ বাধা এবং অন্যদিকে নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের প্রতি নেই ন্যূনতম মানবিক আচরণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইসরাইলিদের চরম নিষ্ঠুরতা সহ্য করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। গাজায় প্রায় ৮০ দিন ধরে বন্ধ ছিল জীবন রক্ষাকারী আন্তর্জাতিক সাহায্য সহায়তা প্রবেশ। যার ফলে সমগ্র জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। বহু পরিবার অনাহার এবং মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গোটা বিশ্ব এই নির্মমতা দেখছে।’

এদিকে, মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অবরোধ ও হামলার মাধ্যমে ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী কাজ করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, খাদ্য, ওষুধ, বেঁচে থাকার অপরিহার্য জিনিস থেকে ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃত বঞ্চিত করা গণহত্যার শামিল।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক ওমর শাকির বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নতুন সামরিক আগ্রাসন মানবতাবিরোধী অপরাধ। তারা জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার মতো জঘন্য কাজে নেমেছে। ইসরাইল আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন লঙ্ঘন করছে। তারা বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য করছে না। বেআইনিভাবে নির্বিচারে সবার ওপর হামলা চালাচ্ছে। এরইমধ্যে গাজার বেশিরভাগ বাড়ি, স্কুল ও হাসপাতাল গুড়িয়ে দিয়েছে। অবশিষ্ট অবকাঠামোও ধ্বংসের মুখে।’

গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র চালু করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। তবে তা কীভাবে কাজ করবে বিস্তারিত কিছুই স্পষ্ট করেনি। জাতিসংঘ এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ইসরাইলিদের এই কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না সংস্থাটি।

এদিকে, ইসরাইলি হামলায় ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনকে হারানোর পর তাদের চিকিৎসক বাবা হামদি আল নিজ্জার এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিল তার পরিবার।

এএইচ