একদিকে, সেনাবাহিনীর ২৫০ বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটনে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে ক্ষমতায় এসেই তার প্রবর্তিত নানা নীতির বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছেন হাজার হাজার মার্কিন।
শনিবার (১৪ জুন) প্যারেড শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই নিউইয়র্ক, শিকাগো থেকে শুরু করে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘নো কিংস’ নামকরণে বিক্ষোভে অংশ নেন মার্কিনরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, নিজেদের অভিবাসন অধিকার আর গণতন্ত্র সুরক্ষার স্বার্থেই রাজপথে নেমেছেন তারা।
শনিবার নো কিংস র্যালিতে অংশ নেয় শিকাগো, টেক্সাস, লস অ্যাঞ্জেলেস, স্যান ফ্রান্সিসকো, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে। শিকাগোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনই রাজা হতে পারেন না।’ এসময় বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দেয় পুলিশ। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘দুঃখিত, তিনি রাজা নন, কিন্তু নিজেকে রাজা মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের জন্য তার চিন্তা নেই। দেশে যে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে, আমি এতেই খুশি।’
আরেকজন বলেন, ‘যেই ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সন্তানকে তা বোঝাতে চাই। যদি আওয়াজ তুলি, সাহায্য করতে পারি, করবো। অনেকেই আছেন, যারা চাকরি করেন, তাদের সাহস নেই। একসঙ্গে আমরা শক্তিশালী।’
স্যান ফ্রান্সিস্কোতে নো কিংস ডে বিক্ষোভে রাজপথে ছিলেন হাজারো মানুষ। টেক্সাসে বিক্ষোভে টেক্সাস ক্যাপিটালের সামনে অংশ নেন হাজারো বিক্ষোভকারী। যাদের হাতে ছিল ট্রাম্প আর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের পোস্টার। যেখানে তাদের স্লোগান ছিল নো কিং, নো ফিয়ার এন্ড নো হেট। ওরেগনে বিক্ষোভের কারণে দাঙ্গা ঘোষণা করেছে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এই সরকার। তাই বিক্ষোভে নেমেছি। আমরা চুপ থাকবো না। অভিবাসীদের হয়ে কথা বলা এখন খুব জরুরি।’
আরেকজন বলেন, ‘তাদের হয়ে কথা বলছি, যারা চাপে পড়ে কথা বলতে পারছে না। আমি নির্মাণশিল্পে কাজ করি, যেখানে সবাই অভিবাসী। এই ভবনগুলোর অর্ধেকই অভিবাসীরা তৈরি করেছে।’
ফিলাডেলফিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারেডস্থলের বাইরেও জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা।
লস অ্যাঞ্জেলেসে কিছুদিন ধরেই চলছিলো আইসের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনীর। ব্যারিকেড ব্যবহার করার পাশাপাশি পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস মোতায়েনের পর শহরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রাতে শহরটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও নানা নীতির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হয়েছে পুয়ের্তো রিকো, মেক্সিকোতেও। বিক্ষোভ হয়েছে কানাডার ওটাওয়াতে মার্কিন দূতাবাসের সামনেও।
ট্রাম্পবিরোধী বিভিন্ন দল দেশজুড়ে ছোট বড় অন্তত ২ হাজার বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে। বেশিরভাগ বিক্ষোভই হচ্ছে নো কিংস থিমে। মিনেসোটায় বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়েছে গুলি বিনিময় ও একজন নিহতের ঘটনায়।