ইরানকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয় রাশিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের বৈঠক
বিদেশে এখন
0

ইরান-ইসরাইল সংঘাত শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে উদ্বেগজনক এবং বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেয় রাশিয়া। ইসরাইলের হামলাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানালেও ইরানকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয় মস্কো। রাশিয়া বলছে, পারমাণবিক কর্মসূচিতে সংঘাত নয়, কূটনীতিক উপায়ে সমাধান পাওয়া সম্ভব। দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যদিও চলমান সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বড় ধরনের ক্ষতি বলে আখ্যা দিয়েছে ক্রেমলিন।

ইরান ইসরাইল সংঘাত নিয়ে এক জটিল সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে রাশিয়া। একদিকে, ইরানের অন্যতম প্রধান মিত্র পাশপাশি ইসরাইলের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় আছে মস্কোর। বিশ্লেষকদের মতে, এমন অবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার অনেক সুযোগ আছে রাশিয়ার সামনে।

চলতি বছরের শুরুতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। যেখানে সামরিক সহায়তার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে চুক্তিটি করা হয়েছে। এতে তেহরানের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসতে বাধ্য নয় রাশিয়া।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এর বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আশা করেছিল তেহরান।

ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তা স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে। যা মস্কো চায় না। কারণ, ইসরাইলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখা মস্কোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া-ইসরাইল সম্পর্ক গভীর হয়। যা এখনও অটুট আছে। ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে কার্যত রাশিয়ার স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছিল ইসরাইল।

এমন অবস্থায় রাশিয়ার রাজনীতিবিদদের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে পশ্চিমারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মস্কো বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের সহকারী অধ্যাপক নিকোলে সুরকভ বলেন, ‘প্রথমত এটি রাশিয়ার যুদ্ধ নয়। এই ধারণাটি এখনও পর্যন্ত বজায় রেখেছে রুশ সরকার। চলমান সংঘাত যেন বিস্তৃত না হয় সেটিই রাশিয়ার মূল উদ্বেগের বিষয়। এই সংঘাতে দ্রুত সমাধান আসলে লাভবান হবে রাশিয়া। তা যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং ইরানের পতন ঘটে তবে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে রাশিয়ায় ও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান উত্তেজনায় গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়লে, এতে সমৃদ্ধ হবে রুশ কোষাগার। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকেও মনোযোগ সরে যাবে বিশ্ববাসীর। ক্রেমলিনের উদ্যোগে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতা হলে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া নিজেকে শান্তিরক্ষী হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।

তবে, এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে পারে রাশিয়া। ইসরাইলের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তেহরানের অসন্তোষ উস্কে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

ইএ