২০২৪ সালে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক শিল্প বিপ্লব যুগের চেয়েওেএক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই হার ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে প্রায় অর্থহীন সাব্যস্ত করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্তদেশগুলোর আবহাওয়াবিদদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিশ্চিত করেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ও অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব।
২০২৫ এ এসে উষ্ণতম জুনের রেকর্ড গড়ার পথে ছিল ইউরোপের দেশ স্পেন। দক্ষিণ ইউরোপে চলছে তীব্র দাবদাহ। একই অবস্থা যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়ায়। দাবানলের প্রকোপ পড়েছে তুরস্কেও। গেল ২০২৪ সালেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভুগিয়েছে বিশ্ববাসীকে। ইতালি ও লাতিন আমেরিকায় তীব্র খরা, নেপাল, সুদান ও ইউরোপে ভয়াবহ বন্যা, মেক্সিকো, মালি ও সৌদি আরবে তীব্র দাবদাহে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, আর যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী সাইক্লোন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব সৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হিসেবে তীব্র দাবদাহ, বন্যা, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও ঘনঘন দেখা যাবে।
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুরুতেই বিশ্বজুড়ে বাড়বে বিপজ্জনক দাবদাহ, যার প্রভাব পড়বে পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থলভাগে। জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞানীদের প্যানেল এবং ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন নিশ্চিত করেছে, শিল্প বিপ্লবের আগে প্রতি ১০ বছরে যে মাত্রার তাপপ্রবাহ দেখা যেতো বর্তমান সময় বিবেচনা করলে আগামী ১০ বছরে তা আরও ২ দশমিক ৮ গুণ বাড়বে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিশ্ববাসীর সামনে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে দাবানল। ২০২৫ এর জানুয়ারিতে যার কিছুটা আভাস মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। অন্তত পুড়ে যাওয়া ১২ হাজারের বেশি অবকাঠামো আর কয়েক ডজন মানুষের প্রাণহানি এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। তবে বন ব্যবস্থাপনা ও অগ্নিকাণ্ডের উৎস নিয়েও ভাবনার কারণ আছে। ইইউ বলছে, ইউরোপে ১০টি মধ্যে নয়টি দাবানল মানবসৃষ্ট কারণে ঘটলেও শুষ্ক আবহাওয়া এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকের কাজ করে।
দাবদাহ আর দাবানলের পর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে হানা দেবে ঝড় ও অতিবৃষ্টি। ২০২৪ যেমন উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছিল তেমন এটি ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ আর্দ্র বছর। গেল বছর ৩০ দিনের ব্যবধানে মোট ছয়টি টাইফুন আঘাত হানে ফিলিপিন্সে। সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র আঘাত হানা হ্যারিকেন হেলেন ও মিল্টনের স্মৃতি ভোলেননি মার্কিনরা। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে অকল্পনীয় পরিণতি অপেক্ষা করছে মানবজাতির সামনে।