উত্তর আফ্রিকার গরম বাতাসে তাপমাত্রা বেড়েছে ভূমধ্যসাগরের উপরিভাগেও। ভূমধ্যসাগরের স্পেন উপকূলে তাপমাত্রা রেকর্ড ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা মৌসুমি গড়ের চেয়ে ছয় ডিগ্রি বেশি।
দিনের আলো ফুটতে থাকার সাথে সাথেই চড়তে থাকে তাপমাত্রার পারদ। তীব্র গরমে দেশজুড়ে স্বাস্থ্য সতর্কতার খবরে দিন শুরু হয় ফরাসিদের। অঞ্চলভেদে ৩০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
হাসফাঁস গরমে দর্শনার্থীদের জন্য রাজধানীসহ ১৬টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পুরো ফ্রান্সের প্রায় ১৪ শ’ স্কুলের সবগুলো। সোমবার থেকে দেশের ১০১টি অঞ্চলের মধ্যে ৮৪টিতেই জারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অরেঞ্জ অ্যালার্ট। বুধবার তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা আবহাওয়া বিভাগের। দু'দিন ধরে বন্ধ প্যারিসের ১১শ' ফুট উঁচু আইকনিক আইফেল টাওয়ার, টিকিট বাতিল করা হয়েছে বৃহস্পতিবারেরও।
এক দর্শনার্থী জানান, মাত্রই ইমেইল পেলাম যে আমাদের টিকিট বাতিল করা হয়েছে। তিন বছর আগে টিকিট কেটেছিলাম। স্রেফ গরমের জন্য বাদ হলো। এই গরমে উপরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে।
অপর এক দর্শনার্থী জানান, আজ সকালে আইফেল টাওয়ারে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের, আর বিকালে ওর্সে মিউজিয়ামে। এখন আমরা ঘরেই বসে থাকবো।
ইউরোপজুড়ে তীব্র দাবদাহে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি রয়েছে জার্মানি, পর্তুগাল, ইতালি আর স্পেনেও। ইতালিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই, গরমে অসুস্থ হয়ে এরই মধ্যে সিসিলিতে প্রাণ গেছে এক নারীর। দেশটিতে উন্মুক্ত স্থানে কাজের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সমস্যা হলো দাবদাহের স্থায়িত্ব। কয়েকদিন হলে এক কথা। আমার ছেলের জন্ম হয় ২০০৩ সালের দাবদাহের সময়, যেটা ইতিহাসের অন্যতম তীব্র দাবদাহ ছিল। সেবার বেঁচেছি। কিন্তু তাও, এবার রাতে কষ্ট যেন আরও বেশি হয়।
চলতি বছর ইতিহাসের উষ্ণতম জুন মাস রেকর্ড করেছে স্পেন ও ইংল্যান্ড। দেশগুলোতে জারি রেড অ্যালার্ট। স্পেনের বার্সেলোনায় গরমে গ্রন্থাগারগুলোকে পথচারীদের জন্য সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে। এমন প্রায় ৪ শ’ আশ্রয়কেন্দ্রে বিনামূল্যে মিলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুবিধা আর পানি।
তারা জানান, গরম থেকে মুক্তি শুধু নয়, দিনভর ঘরে বসে একঘেয়েমিতে না ভুগে এখানে শীতল পরিবেশে সারাদিন বসে গান শোনা যাবে, খেলা যাবে।
মঙ্গলবার ৩৩ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে ইংল্যান্ড, যেটি বছরের উষ্ণতম দিন। অধিকাংশ এলাকায় সোমবার থেকে সপ্তাহজুড়ে জারি আছে রেড অ্যালার্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সতর্কতা।
স্থানীয় একজন জানান, এতো গরমে আমি অভ্যস্ত নই। অনেক বছর ধরে এখানে আছি। প্রথম বছরেই অবিশ্বাস্য গরমে কষ্ট পেয়েছি। আবাসিক এলাকাগুলোতে এমন গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কম দেখে অবাক হয়েছি।
তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পুড়ছে দাবানলে। বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণতা বাড়তে থাকা মহাদেশের তালিকায় শীর্ষে ইউরোপ। বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ গতিতে তাপমাত্রা বাড়ছে ইউরোপে। চলমান দাবদাহের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় ইউরোপের কোনো মানুষ, সতর্কতা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্ল্যারে নুলিস বলেন, ‘বর্তমানে একটা শক্তিশালী উচ্চ চাপসম্পন্ন বলয়ে রয়েছি আমরা। উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা গরম বাতাস আটকে রয়েছে এখানে। এ কারণেই এতো বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। প্রত্যেকে ঝুঁকিতে আছেন। দিনের মধ্যভাগে পানি ছাড়া বাইরে বের হলে, দৌড়াতে বা বাইকে চড়ে বের হলেও অসুস্থ হতে পারেন, অসুস্থতা প্রাণঘাতীও হতে পারে।’