ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় কিছুতেই থামছে না ইসরাইল। খাবারের আশায় লাইনে থাকা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপরও চালাচ্ছে গুলি। ২৭ মে থেকে প্রতিদিনই নজিরবিহীন এ তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। এতে দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের শিকার হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা।
আধুনিক ইতিহাসের গাজায় সবচেয়ে নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা ছাড়াও জিএইচএফকে মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেসকা আলবানিজ ।
তিনি বলেন, ‘গাজায় মানুষ কল্পনাতীত দুর্ভোগ সহ্য করছে। সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, দুই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন। শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। তথাকথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন একটি মৃত্যু ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য বলছে, ২৭ মে থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ছয়শ’র বেশি ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির। এখন পর্যন্ত হিসেব করলে সেই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ফিলিস্তিনিদের উপর গুলি চালিয়েছে। আমাদের একটি স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আমাদের জবাবদিহিতা প্রয়োজন।’
এ অবস্থায় বিতর্কিত এই সংস্থাটির ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলেছে ১৩০টিরও বেশি সাহায্য সংস্থা ও এনজিও। এমনকি ইসরাইলের অর্থনীতিকে গণহত্যার অর্থনীতি আখ্যা দিয়ে তেল আবিবের সাথে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেন, ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই ইসরাইলের ওপর পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থগিত করতে হবে। জবাবদিহিতাও কার্যকর করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পরিণতির সম্মুখীন নিশ্চিত হয়।’
এর আগে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাতে ‘ক্ষুধা’কে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।