কিয়েভের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে চতুর্থবারের মতো চলছে ইউক্রেন রিকোভারি কনফারেন্স। ইতালির রাজধানী রোমে এবারের সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় ৩০টি দেশের নেতা। এসময় সামরিক ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে জেলেনস্কি সরকারের প্রতি সমর্থন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, ইউক্রেনের আর্থিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিত্র দেশগুলো। এছাড়াও ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য তৈরি করা হয়েছে সবচেয়ে বড় তহবিল ইউরোপীয়ান ফ্ল্যাগশিপ ফান্ড। ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়াকে ৬০ হাজার কোটি ডলার পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর।
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ বলেন, ‘ইউক্রেনের এনার্জি সাপোর্ট ফান্ডে সবচেয়ে বড় দাতা জার্মানি। আমাদের দেশ ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি ইউক্রেনের এনার্জি সিস্টেম পুনর্গঠনে কাজ করবে। তবে রাশিয়াকে ৬০ হাজার কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো আপোষ করা হবে না।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যা চলছে তা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করছে। আমার মতে, আজকের সম্মেলনের প্রাপ্ত ফল নিয়ে আমাদের সবার আনন্দিত হওয়া উচিত। এ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া হামলা জোরদার করায় প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব। জেলেনস্কি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশটির জন্য ৫ হাজারের বেশি এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ও প্রায় সাড়ে ৩৮ কোটি ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবি, সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের কাছে কমপক্ষে ১০টি প্যাট্রিয়ট মিসাইল সহায়তা চেয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর সহায়তা পুনরায় শুরুর বিষয়ে আমরা সব ধরনের ইঙ্গিত পেয়েছি। আমরা তার কাছে ১০টি প্যাট্রিয়ট মিসাইল চেয়েছি। আমাদের জন্য ২টি মিসাইল কিনবে জার্মানি। একটি কিনবে নরওয়ে। আশা করছি সহায়তার জন্য আগামীতে আরও দেশ এগিয়ে আসবে।’
এদিকে কুয়ালালামপুরে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠক করেছেন মার্কিন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রায় ১ ঘণ্টার বৈঠক শেষে মার্কো রুবিও জানান, ইউক্রেন শান্তি আলোচনার জন্য নতুন চিন্তাধারা বিনিময় করেছে দু’পক্ষ। তবে সংঘাত বন্ধে রাশিয়ার কাছ থেকে কাঙিক্ষত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও ক্রেমলিন বলছে, শান্তি আলোচনা থমকে নেই।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এখনো জবাব আসা বাকি। তৃতীয় দফায় আলোচনা হবে কি না, তা কিয়েভের ওপর নির্ভর করছে। বরাবরই বলে আসছি আমরা শান্তির পক্ষে। তবে যতদিন শান্তি আসবে না, ততদিন বিশেষ সামরিক অভিযান চলবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘দেখুন, প্রেসিডেন্ট পরিষ্কার করেছেন তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে কাঙিক্ষত সহায়তা না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ। আমরা আশা করছি, দুই পক্ষই শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করবো। যেখানেই সম্ভাবনা দেখতে পাবো, সেখানেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবো।’
এদিকে এনবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আগামী সোমবার (১৪ জুলাই) রাশিয়াকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিবেন তিনি। যদিও বিষয়টি পরিষ্কার করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।