যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিতে কফি-জুসের বাজারে ঝড়; পাল্টা হুঁশিয়ারি ব্রাজিলের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিদেশে এখন
0

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে মার্কিন বাজারেও। ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে দেশটির বাজারে কফি ও জুসের দর কয়েক গুণ বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ব্রাজিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় বসার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো চীন। দেশটির ওপর সর্বোচ্চ ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে দেশটি। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এই শুল্কের পরিমাণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে বেইজিং।

চীনের পর এবার ব্রাজিলের ওপর চড়াও হয়েছে ওয়াশিংটন। দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। যা আগামী পহেলা আগস্ট পর্যন্ত কার্যকরের কথা রয়েছে। মূলত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসানোরোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করায় দেশটির বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেন ট্রাম্প।

মার্কিন সেনসাস ব্যুরোর তথ্যমতে, ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের ওপর যদি ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত থাকে তবে এর বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মার্কিন পণ্য বাজারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কফি ও জুসের চড়া দাম গুণতে হবে মার্কনদের।

ব্রাজিলের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কফির উৎপাদন হয় ব্রাজিলে। যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ মার্কিন ভোক্তাদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্রাজিলের কফি রপ্তানিকারক কাউন্সিলের মার্সিও ফেরেইরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক বাড়ায় তবে তাদের বাজারে এর বড় ধরণে প্রভাব পড়বে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ কফি পান করেন। তাই যুক্তরাষ্ট্র যদি ব্রাজিলের ওপর শুল্ক আরোপ করে তবে তাদের দেশের পণ্যের দর অবশ্যই বাড়বে।

কফি ছাড়াও মার্কিন জুসের বাজারও ব্রাজিলের দখলে। বিশ্বের সবচেয়ে বেমি জুস উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল। যার ৮০ শতাংশই বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ব্রাজিলের মোট জুস রপ্তানির অর্ধেকের বেশি যায় মার্কিন বাজারের। যদিও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে কমলা উৎপাদনের মাধ্যমে জুস রপ্তানি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র । তবে এক্ষেত্রে সফলতা অনেকটাই অধরা। কারণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি উৎপাদনে ধস নামবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির কৃষি বিভাগ। যা গত ৮৮ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন।

এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাদের বিকল্প বাজার খুঁজে নেবে তবে দিনশেষে দুই দেশেই এক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়বে।

মার্সিও ফেরেইরা বলেন, ব্রাজিল সরকার হয়তো রপ্তানির জন্য বিকল্প দেশ বেছে নেবে। তবে কোন দেশেই এক্ষেত্রে লাভবান হবে না। তাই শান্ত হয়ে দুই দেশের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

এদিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা। এছাড়াও ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে বলে যে তথ্য প্রচার করছেন ট্রাম্প তা মিথ্যা বলেও অভিযোগ তার।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই তিনি ভুল তথ্য জানাচ্ছেন। ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোন বাণিজ্য ঘাটতি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

ইএ