রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তাবে পুতিনের ইতিবাচক সাড়া

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
বিদেশে এখন
0

একদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অন্যদিকে পাল্টাপাল্টি হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এবার যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার বিষয়ে জেলেনস্কির প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন পুতিন। এদিকে, এক রাতেই ইউক্রেনে ৪২৬টি ড্রোন ও ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। জবাবে মস্কোর বিমানবন্দর লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে কিয়েভ।

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুই পক্ষেরই। এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে গেল পাঁচ মাসে দুই দফায় আলোচনায় বসে মস্কো ও কিয়েভ। তবে আলোচনায় বন্দি বিনিময়ে ঐকমত্য হলেও, যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি নেই।

এবার যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আগামী সপ্তাহেই মস্কোর সঙ্গে নতুন দফা শান্তি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন তিনি। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য সবকিছু করা উচিত।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় গতি বাড়াতে হবে। যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে ইউক্রেন। তবে রাশিয়াকে এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্দি বিনিময়, শিশুদের ফিরিয়ে দেয়া, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। সত্যিকার অর্থে শান্তি, স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা।’

জেলেনস্কির প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে প্রস্তুত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তবে মস্কোর মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধে তাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করা।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘রাশিয়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। তবে রাশিয়ার মূল বিষয় হল যুদ্ধে মস্কোর লক্ষ্য অর্জন করা। বিষয়গুলো বেশ স্পষ্ট এবং এসব নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে প্রক্রিয়াটি কীভাবে হবে তা দুই পক্ষের আলোচনার ওপর নির্ভর করছে।’

এদিকে, রাতভর পাল্টাপাল্টি হামলা জোরদার রেখেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিয়েভকে লক্ষ্য করে ৪ শতাধিক ড্রোন এবং ২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এরমধ্যে ২২৪টি ড্রোন ও বেশকিছু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেনের বিমান। যদিও রাশিয়ার ২০৩টি ড্রোন ইউক্রেনের রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বলে জানিয়েছে কিয়েভ।

রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে কয়েক রাত ধরেই সাবওয়েতে, বিমানবন্দর, ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে রাত কাটছে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের। গেল দুই মাস ধরে, ক্রমাগত রুশ হামলায় ঝুঁকির মুখে ইউক্রেনের ৩৭ লাখ বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘আমরা আশ্রয়ের জন্য সপ্তাহে দুই তিন দিন এখানে আসি। সম্প্রতি রাশিয়ার হামলা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন চোখের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে। যা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। আমরা উদ্বিগ্ন ও ভীত। ভয়ে সারারাত ঘুমাতে পারি না। তাই এখানে আশ্রয় নিয়েছি।’

জবাবে রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। এ সময় রাজধানী মস্কোর উঁচু একটি অ্যাপার্টমেন্টে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, প্রধান বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করে ইউক্রেন। এ সময় বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত করা হয়। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় যাত্রীদের মধ্যে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক রাতেই ইউক্রেনের ১৪২টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

খারকিভ, দোনেৎস্ক এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের অন্তত ১০টি বসতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। তবে রুশ বাহিনীর বেশিরভাগ আক্রমণই প্রতিহত করার দাবি করছে ইউক্রেন বাহিনী।

ইএ