২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে হাউডি মোদি নামে ঐতিহাসিক র্যালি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা ছিল আমেরিকার মাটিতে বিদেশি কোন সরকার প্রধানের সবচেয়ে বড় সংবর্ধনা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। যেখানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদিকে সত্যিকারের বন্ধু বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেসময় মোদি-ট্রাম্পের রোমাঞ্চকর এই বন্ধন দেখে চোখ কপালে উঠেছিলো সবারই।
তবে ৭ বছর পেরিয়ে এবার তাদের এই রঙিন সম্পর্ক অনেকটা ফিকে হয়ে আসছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই দুই নেতার সম্পর্ক। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সুবিধা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ভারতের বিরোধীদলগুলোর।
ট্রাম্প-মোদির সম্পর্কের টানাপড়েন কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা বোঝা না গেলেও, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অভিষেক অনুষ্ঠানে মোদি দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়টি থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছিলো খুব একট সুখকর হবে না তাদের পরবর্তী সময়। বাস্তবে ঘটলোও তাই। ক্ষমতায় বসেই যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর সম্পূরক শুল্কের ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সেই তালিকা থেকে বাদ পড়লো না মিত্রদেশ ভারতও।
আরও পড়ুন:
ভারতের ওপর শুরুতে ২৬ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। গত ৪ মাস ওয়াশিংটন- নয়াদিল্লির একাধিক বৈঠকেও শুল্ক কমানোর ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ। অবশেষে পহেলা আগস্ট থেকে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কার্যকর করেন ট্রাম্প। যেখানে প্রতিবেশি পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ ও বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয় ২০ শতাংশ শুল্ক।
শুধু সম্পূরক শুল্ক দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি, একই সঙ্গে ভারতের ওপর আরোপ করেছেন পেনাল্টি ট্যারিফও। রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার দায়েই মূলত নয়াদিল্লিকে এই সাজা দিলো ওয়াশিংটন।
এবার ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত সরাসরি রাশিয়াকে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার এ বিষয়ে ফক্স নিউজকে দেয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রধান স্টিফেন মিলার বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে ভারত। এক্ষেত্রে প্রতিবেশি চীনও ভারতের পাশে রয়েছে বলে অভিযোগ তার।
আরও পড়ুন:
হোয়াইট হাউসের স্টিফেন মিলার ডেপুটি প্রধান বলেন, ‘ভারত ক্রমাগত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে, বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অবাক করা বিষয় হলো চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বন্ধু বলে বিশ্বে তারা নাটক করছে, অন্যদিকে মার্কিন পণ্য কিনছে না তারা।’
তবে ভারতের সঙ্গে সুন্দর কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেই ট্রাম্প এগিয়ে যেতে চায় বলে ও উল্লেখ করেন স্টিফেন মিলার।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রধান স্টিফেন মিলার বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সবসময় সুন্দর সম্পর্ক চান ট্রাম্প। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভারতের অর্থায়ন বন্ধ করতে চান তিনি। এক্ষেত্রে আলোচনার টেবিলে কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধান চান ট্রাম্প। অন্যথায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার নয়। ইউক্রেনে শান্তি ফিরবে না।’
হোয়াইট হাউসের এমন বিষধর অভিযোগের বিরুদ্ধে অবশ্য এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি নয়াদিল্লি। তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রয়টর্সের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা বন্ধ করবে না ভারত।
কারণ হিসেবে জানা যায়, রাশিয়ার তেল ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তুলনামূলকভাবে সস্তা। ২০২১ সালে ভারতের মাত্র ৩% তেল আসত রাশিয়া থেকে। এখন সেই হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। আবার রাশিয়ার সঙ্গে তেল কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে ভারতের। যে কারণে রাতারাতি মস্কো থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে পারবে না নয়াদিল্লি।
যদিও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে আশায় বুক বেধেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত আর তেল কিনবে না বলে মনে হচ্ছে। এমনটাই আমি শুনেছি। জানি না এই তথ্য কতটুকু সত্য কী মিথ্যা। যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় তবে খুবই ভালো। দেখা যাক কী হয়।’
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে রুশ তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই ভারত। অপরদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনও নতুন বাণিজ্য কৌশলের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুকে নির্বাচনী অস্ত্র বানাচ্ছে। ফলে আগামী দিনে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যায়, তার ওপর নজর থাকবে বিশ্বের কূটনীতিক মহলের।