বিবিসি বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল বা ব্যর্থ যা-ই হোক, নিজের কৃতিত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে ভুলছেন না তিনি।
গত ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউজে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের চাপের মুখে ট্রাম্প জানান, তিনি ৬টি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। দাবি করেন, সবগুলো যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শান্তি চুক্তি হয়েছে। এর একদিন পরই সেই সংখ্যা বাড়িয়ে বললেন ৭টি।
সংবাদমাধ্যমটি ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের দাবির তালিকাও প্রকাশ করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে—ইরান-ইসরাইল, ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা-ডিআর কঙ্গো, মিশর-ইথিওপিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান ও সার্বিয়া-কসোভো।
বিবিসির ভাষ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই ‘শান্তির দূত’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ৬ মাসে তিনি ৬টি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। তার শাসনামলে কোনো দেশ যুদ্ধে জড়ায়নি বলেও গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
দীর্ঘদিন ধরেই আঞ্চলিক বিরোধ চলে আসছিল ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে। গেলো ১৩ জুন হুট করেই ইরানে ইসরাইল হামলা চালিয়ে বসলে শুরু হয় সংঘাত, যা চলে টানা ১২ দিন। যেখানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সংঘাতে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্রও।
এরপর ২৩ জুন ট্রাম্প ঘোষণা দেন দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে যাচ্ছে। যদিও ইরান চূড়ান্ত বিজয়ের দাবি করছে। একইভাবে ইসরাইল বলছে, হুমকি মনে করলে ইরানে ফের হামলা চালাবে তেল আবিব। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিকে যুদ্ধ বন্ধ বলা ঠিক হবে না, বরং একধরনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি।
গেলো এপ্রিলে কাশ্মীরে পর্যটক হত্যার ঘটনায় সংঘাতে জড়ায় এশিয়ার চির প্রতিদ্বন্দী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলার চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় মুহূর্তেই সমাধান এসেছে।
এর জেরে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করে পাকিস্তান। যদিও ভারত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই কৃতিত্ব দিতে রাজি নয়।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধ বন্ধে শুল্কের হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৬ জুলাই তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন যুদ্ধ থামাতে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এর কয়েকদিন পরই তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল এক সপ্তাহেরও কম।
খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধে জড়ায় রুয়ান্ডা ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান অব কঙ্গো। চলতি বছরের জুনে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যদিও দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।
এদিকে নীলনদের ওপর বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েন ছিল মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে। ১২ বছরের বিরোধ নিরসনের প্রতিশ্রুতিও দেন ট্রাম্প। এ উদ্যোগকে মিশর স্বাগত জানালেও, বেকে বসে ইথিওপিয়া।
এছাড়া ৮ আগস্ট হোয়াইট হাউজে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়। দুই দেশের নেতারাই এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে কৃতিত্ব দেন। ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্য বলেও মত তাদের।
গেলো ২৭ জুন ট্রাম্প দাবি করেন, তার কারণে সার্বিয়া ও কসোভো যুদ্ধে জড়ায়নি। তবে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও, সরাসরি যুদ্ধ হয়নি।
বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেসব যুদ্ধ বা সংঘাত বন্ধের কৃতিত্ব নিচ্ছেন, তার বেশিরভাগের স্থায়িত্ব ছিল অল্প কয়েকদিনের। কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে এখনো কার্যত ফলাফল অর্জন করতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।