যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাইলে বিক্ষোভ

ইসরাইলে বিক্ষোভ
বিদেশে এখন
0

দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্যেও গাজায় রাতভর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। শনিবারের হামলায় প্রাণ গেছে শিশুসহ অন্তত ৬৩ জনের। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উপত্যকার প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে ইসরাইলি সেনারা। এদিকে, ত্রাণ আটকে রেখে গাজাবাসীকে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়ায় আবারও ইসরাইলের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। এদিকে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নির্ভরযোগ্য কোনো চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নেতানিয়াহু প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন ইসরাইলের সাধারণ মানুষ।

খাবার ও নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করেও গাজার বাসিন্দাদের যখন দেশ ছাড়তে বাধ্য করা যাচ্ছে না তখন উপত্যকাটির দখল নিতে ভিন্ন পথে হাঁটছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনী। জনবহুল অঞ্চলগুলোতে একের পর এক বোমা ফেলছে আইডিএফ। উদ্দেশ্য উপত্যকার বাসিন্দাদের গাজা সিটি থেকে সরিয়ে মূল শহরের দখল নেয়া। নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই পরিকল্পনাকে জাতিগত নিধনের সঙ্গে তুলনা করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

শনিবার আইডিএফের হামলার লক্ষ্য ছিল গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল বালাহ। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, গেল ১০ দিন ধরে ধাপে ধাপে শহরের চারপাশে যুদ্ধযান মোতায়েন করেছে আইডিএফ। হামলার কিছুক্ষণ আগে বাসিন্দাদের ঘর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে স্থল ও আকাশ পথে চালানো হচ্ছে অভিযান।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা কাজ করছিলাম। সতর্কবার্তা দেয়া হলো এখনই সবাইকে নিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় দেয়া হয়নি। এখানের সব ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ গাজায় দুর্ঘটনাবশত আইডিএফের বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গেছে ইসরাইলি পদাতিক বাহিনীর এক কর্মকর্তার। খান ইউনিটের একটি অবকাঠামোতে হামলার আগে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ।

এছাড়া, ত্রাণের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ায় এর পুরো দায়ভার ইসরাইলকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার প্রধান। অভিযোগ করেন, দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর সব ধরণের পথ খোলা থাকার পরেও নেতানিয়াহু প্রশাসন তা আমলে নেয়নি।

আরও পড়ুন:

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, নিঃসন্দেহে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতেই এ দাবি করা হয়েছে। এটা দুর্ভিক্ষ, গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে। অথচ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলে আমরাই এ দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারতাম। কিন্তু ইসরাইলের কারণে সীমান্তে ত্রাণ আটকে আছে। মাত্র ১০০ মিটার দূরে খাবার আছে। এখানকার জমিও উর্বর। অথচ এখানেই দুর্ভিক্ষ।

এদিকে, শনিবার, মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে লেখা একটি চিঠিতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোয়ান দাবি করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে মেলানিয়া যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন, গাজার মানবিক সংকট পরিস্থিতি নিয়ে তেমন উদ্বেগ নেই তার। এমিনি এরদোয়ান মনে করেন, মেলানিয়ার গাজাবাসীর প্রতি সমান সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধে ভুক্তভোগী শিশুদের নিয়ে তার কথা যেমন বিশ্ববাসির হৃদয় ছুয়েছে তেমনি গাজার শিশুদের মানবিক অবস্থা তুলে ধরতেও মার্কিন ফার্স্ট লেডির প্রতি আহবান জানান এমিনি।

অন্যদিকে, গাজা যুদ্ধের প্রায় দুই বছর হতে চললেও এখনও পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনো সমাধান আনতে না পারায় নেতানিয়াহু প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরাইলের অভ্যন্তরেই। শনিবারও তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।

এদিন ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় চুক্তি করতে দেরি করে ফেলেছেন নেতানিয়াহু। অক্টোবরে আটক হওয়া জিম্মিদের মধ্যে বর্তমানে ২০ জনও জীবিত আছেন কী না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়েছে বিক্ষোভ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ। ইচ্ছাকৃতভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

ইএ