কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ভয়াবহ হামলা চালিয়েছ রুশ বাহিনী। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ছাড়াও; ইউক্রেনের আন্তঃনগর ট্রেন ও বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়; কিয়েভে থাকা ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইইউ মিশনের কর্মকর্তাদের বাসভবনেও আঘাত হেনেছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে চলমান শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যে রাশিয়ার এ হামলায় ক্ষিপ্ত ইউরোপীয় নেতারা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রুশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতদের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে চাপ দিলো যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এমনকি শিগগিরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদ ইউক্রেনে সহায়তা কাজ লাগানোর বার্তা দিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন।
আরও পড়ুন:
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘কিয়েভে থাকা আমাদের ইইউ অফিসগুলোতেও আঘাত হানার ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ। জুলাইয়ের পর থেকে এটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। তাই আমরা শিগগিরই আমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ১৯তম প্যাকেজ ঘোষণা করবো। একই সাথে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা এবং পুনর্গঠনে অবদান রাখার জন্য জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ কাজে লাগানোর বিষয়টিও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
এমনকি হামলাটিকে রাশিয়ার এক প্রকার হুমকি হিসেবে দেখছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপের দেশগুলো। ইইউর নেতাদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করার পর, যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক না করার বিষয়ে এটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই দেখছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মের্জ।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মের্জ বলেন, ‘স্পষ্টতই এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে কোনও বৈঠক হবে না। গত সপ্তাহে যখন আমরা একসাথে ওয়াশিংটনে ছিলাম তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যে বিষয়ে একমত হয়েছিল তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।’
ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুট বলেন, ‘আমি ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিনিধি কাজা ক্যালাস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েনের সাথে যোগাযোগ করেছি। যা ঘটেছে তাতে আমরা হতবাক। তবে আমরা জানি যে রাশিয়া অনেক কিছু করতে সক্ষম। তাই আমাদের নির্বোধ হলে চলবে না। আমি জানি জার্মানিও নির্বোধ নয়। এ অবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।’
এদিকে ইউক্রেনে চালানো রাশিয়ার হামলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খুশি নন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুশ হামলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, তিনি এই খবরে খুশি ছিলেন না। কিন্তু অবাকও হননি। এই দুটি দেশ দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধে লিপ্ত। রাশিয়া কিয়েভের উপর এই আক্রমণ শুরু করেছে। একইভাবে ইউক্রেনও সম্প্রতি রাশিয়ার তেল শোধনাগারগুলোতে আঘাত হানছে। তারা আগস্ট জুড়েই তাদের আক্রমণের সময় রাশিয়ার তেল শোধনাগারের ২০ শতাংশ ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।’
বৃহস্পতিবার কিয়েভে হামলা ছাড়াও দানিয়ুব নদীর মোহনায় একটি ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা নৌকায় হামলা চালিয়ে ধ্বংসের দাবি রুশ বাহিনীর। এসব হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে রাশিয়ার ক্রানস্নোদারের তেল শোধনাগারে সফল হামলা দাবি ইউক্রেনীয় বাহিনীর।
উত্তেজনার পারদ বাড়ায় আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য একটি কাঠামো তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কে গেছেন দেশটির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ। এর মধ্যেই পেন্টাগন জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সহায়তায় ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৩৩৫০টি মার্কিন এরাম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডস।