রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উত্তেজনা: মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে ওয়াশিংটন

জেলেনস্কি, পুতিন ও ট্রাম্প
বিদেশে এখন
0

কিয়েভের ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইইউ মিশনসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলার পর শনিবার ডিনিপ্রোপেট্রোভস্কেও রুশ আক্রমণে বেড়েছে যুদ্ধ উত্তেজনা। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া শান্তি প্রচেষ্টাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাশিয়ার ওপর চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর যুদ্ধ না থামালে মস্কোর ওপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা আরোপে আর ভাববে না বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন কূটনীতিক জন কেলি।

ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে বৃহস্পতিবার কিয়েভে ভয়াবহ হামলা চালানোর পর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আগুনে ঘি ঢাললো রাশিয়া। শনিবার রাত থেকে দেশটির ডিনিপ্রোপেট্রোভস্কসহ বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আক্রমণ চালাচ্ছে পুতিন বাহিনী। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। এতে যুদ্ধবন্ধে চলমান শান্তি প্রচেষ্টাকে রাশিয়া অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে কিয়েভের ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইইউ মিশনসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলার জেরে মস্কোর উপর চাপ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শুক্রবার নিউইয়র্কে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সাথে বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক। এসময় ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

একই ঘটনায় শুক্রবার জরুরি সভা করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। যেখানে প্রমাণ হিসেবে বেশ কয়েকজনের ছবি হাতে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া জানান, বৃহস্পতিবার ৪ শিশুসহ তাদের ২৫ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে রাশিয়া। এছাড়া ১১ শিশুসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষায় আরও আকাশ প্রতিরক্ষা সহায়তার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী।

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আমাদের জনগণ ও ভূখণ্ড রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ পাল্লার রুশ আক্রমণ মোকাবিলায় অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন। যেভাবেই হোক রাশিয়ার বেআইনি যুদ্ধ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের সকল হত্যাকাণ্ড এবং আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। তারা যে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন করছে তা বন্ধ করা জরুরি হয়ে ওঠেছে।’

কিয়েভে চালানো সবশেষ হামলার মধ্য দিয়ে রাশিয়া আবারও আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান স্ট্যাভ্রোস।

আরও পড়ুন:

ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের প্রধান স্ট্যাভ্রোস ল্যাম্ব্রিনিডিস বলেন, ‘আমি এ কাউন্সিলের সকল সদস্যকে তাদের প্রভাব ব্যবহার করে রাশিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি; যাতে তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় এবং ইউক্রেনে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে কাজ করে।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রাশিয়াকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সতর্কবার্তা পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন কূটনীতিক জন কেলি বলেছেন, এভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকলে মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে আর ভাববে না ওয়াশিংটন।

মার্কিন কূটনীতিক জন কেলি বলেন, ‘ইউক্রেনের ওপর সর্বশেষ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অসংখ্য বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আবাসিক ভবন, ইইউ প্রতিনিধিদলের কার্যালয় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভবনের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শান্তি প্রচেষ্টা নিয়ে রাশিয়া যে গুরুত্ব দিচ্ছে না তা প্রকাশ পায়। তাই গঠনমূলক আলোচনায় যুক্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধের মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা পরিণতিগুলো এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ অবস্থায় জাতিসংঘ নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, ‘কিয়েভের সাথে শীর্ষ বৈঠকে বসতে প্রস্তুত মস্কো। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ পূর্ব প্রস্তুতি এবং যুদ্ধবন্ধের মূল বিষয়বস্তুগুলো নিয়ে আগেই ঐক্যমতে পৌঁছানোর আভাস না থাকলে বৈঠক করে কোনো লাভ নেই।

জাতিসংঘের রুশ প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি যে আমরা এ পরিস্থিতি বিবেচনা করছি। তবে এ ধরনের একটি বৈঠকের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন। এছাড়া আগেই এর মূল বিষয়বস্তুগুলো ঠিক করা উচিত। অন্যথায়, বৈঠক করার কোনও অর্থ নেই।’

এদিকে প্রতি মাসে রুশ বাহিনী ৬০০ থেকে ৭০০ বর্গকিলোমিটার ইউক্রেনীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই। আর রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত শহীদদের পরিবারের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। তবে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার মতে, ১৫ হাজার সেনার মধ্যে প্রায় ৬শ’ নিহত হয়েছেন।

ইএ