পাহাড়ি স্থলবেষ্টিত দেশ নেপালের উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত। দেশটিতে বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মধ্যে ৮টির অবস্থান, যার মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট।
প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি শর্মার পদত্যাগের পর শান্ত, নিবিড় হিমালয় কন্যা নেপালে চলছে প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতা। এশিয়ার দুই পরাশক্তির মাঝখানে থাকা এ পাহাড়ি রাষ্ট্র ভূরাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কেবল দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেই বিপর্যস্ত করছে না, বরং এর অভিঘাত পড়তে পারে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ওপর। দীর্ঘ মেয়াদে এ অস্থিতিশীলতা আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, নেপালের অস্থিতিশীলতার প্রভাব এরইমধ্যেই সীমান্ত বাণিজ্যে পড়তে শুরু করেছে। ভারতের সঙ্গে নেপালের একাধিক স্থলবন্দর দিয়ে দৈনিক বিপুল পরিমাণ পণ্য চলাচল হয়।
আরও পড়ুন:
সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানির সরবরাহ।
ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে চীনের সম্ভাব্য প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি। নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অঞ্চলটিতে ভারতের প্রভাব কমে চীনের ভূমিকা বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিআরআইয়ে যোগ দেয় নেপাল। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক ও রেল সংযোগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি।
কিন্তু নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনায়ও বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেপালের পরিস্থিতি বাংলাদেশ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরও প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
সীমান্তপথে চলাচল সীমিত হয়ে গেলে আঞ্চলিক সরবরাহ শৃঙ্খলায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিশেষ করে ভারত হয়ে যেসব দেশ আমদানি-রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এটি উদ্বেগজনক।
শুধু অর্থনীতি ও বাণিজ্য নয়, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরাপত্তাজনিত হুমকিও তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক শূন্যতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও চোরাচালান চক্রকে সক্রিয় করে তুলতে পারে। সীমান্ত অঞ্চলে মানবপাচার, মাদকপাচার কিংবা সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।