ক্ষমতায় আসার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট হলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। তবে হোয়াইট হাউজের মসনদে বসার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কার্যকর কিছু করতে পারেননি তিনি। এর আগে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। এবার দুই নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলে যুদ্ধ বন্ধে তার অবদানের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে পুতিনের অবস্থান জানতে ফোনকলটি ট্রাম্পের কাছে বেশ গুরুত্ব বহন করেছিল। তবে পুতিন ফোনটি রিসিভ করেছিলেন একটি স্কুলের প্রোগ্রাম থেকে। যা নিয়ে এরইমধ্যে অভিযোগ উঠছে, বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। ফোনালাপের পর ট্রাম্প জানান ইউক্রেনের সঙ্গে অবিলম্বে যুদ্ধবিরিত নিয়ে আলোচনার জন্য রাজি হয়েছে রাশিয়া। ।
তবে ক্রেমলিনের দাবি, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি দুই নেতা। বরং বন্দিবিনিময় নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প মূলত গুরুত্ব দিয়েছেন ইউক্রেনের সঙ্গে সংকট সমাধানের পর মস্কো-ওয়াশিংটনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কোন্নয়নের দিকে।
ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, ‘মার্কিন ও রুশ প্রেসিডেন্ট দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। এসময় বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করার ওপর বারবার জোর দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা কবে শুরু হবে সেই সময় নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হয়নি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা আরও কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইউরোপের আহ্বান কানে তোলেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনে সামরিক সহায়তাও বন্ধ করে দেন তিনি। এর আগে, ট্রাম্প বেশ স্পষ্ট করে বলেছিলেন, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে চলমান সংকট আরও গভীর হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের বাকি দেশগুলোর উচিত রাশিয়ার সঙ্গে কিছুটা সমঝোতামূলক অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তা সক্ষমতা অর্জন করা। এমনটাই মনে করেন জার্মানির রাজনৈতিক বিশ্লেষক উলরিক গুয়েরোট। যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ার পেছনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটকেও দায়ী করেন তিনি।
জার্মানির রাজনৈতিক বিশ্লেষক উলরিক গুয়েরোট বলেন, ‘এখানে ন্যাটোর একটি বড় ভূমিকা আছে। কারণ ইউক্রেনের চাহিদা এবং সহায়তার সক্ষমতার বিষয়টি ন্যাটোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। একইসঙ্গে গোটা ইউরোপ মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থকেও বিবেচনা করতে হবে। এখন, ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যাটোর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা এই সংঘাতের অন্যতম কারণ।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নেতারা সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের পর ভিন্ন ভিন্ন ফল আসতে পারে। যুদ্ধবিরতিতে আসতে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিন একটি সমঝোতায় আসতে পারেন। এ বিষয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে মধ্যবর্তী বা নিরপেক্ষ একটা অবস্থানে থাকতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।