স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ‘বুল রান’ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বিশ্ববাসীর

ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

বছর ঘুরে আবারও শুরু হলো স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ‘বুল রান’। দেশটির পাম্পলোনায় ৯ দিনের স্যান ফার্মিন উৎসবে অংশ নিচ্ছেন ১০ লাখ দর্শনার্থী। নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও ৮৪৬ মিটারের ভিন্নধর্মী দৌড়কে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বিশ্ববাসীর মধ্যে।

প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে তিন যুবক। পেছনে এক ঝাঁক ষাঁড়ের পাল। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ চলচ্চিত্রের কথা বললে চোখের সামনে ভেসে আসবে এই দৃশ্য। ভয়কে জয় করে জীবনকে দেখার সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছিল কবির, অর্জুন ও ইমরান। উপমহাদেশে ষাঁড় দৌড়ের খেলা জনপ্রিয় করেছিল জোয়া আখতার পরিচালিত বলিউডের এই সিনেমা।

বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে স্পেনের অন্যতম আলোচিত ও সমালোচিত দৌড় ‘বুল রান’। পাম্পলোনা শহরে প্রতিবছরের মতো জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফোটানো হয় বিশেষ আতশবাজি চুপিনাজো। এর মাধ্যমে শহরের সিটি হল স্কয়ারে শুরু হয় নয় দিনব্যাপী স্যান ফার্মিন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সাদা কাপড়ের সঙ্গে লাল রঙের স্কার্ফ পড়া কয়েক হাজার মানুষ উৎসবে অংশ নিতে জড়ো হয়েছেন পাম্পলোনা শহরে।

স্যান ফার্মিন উৎসবের নয় দিনের প্রতিদিনই সকাল ৮টায় শুরু হয় বুল রান। বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত দৌড় শেষ হতে সময় প্রয়োজন মাত্র তিন থেকে চার মিনিট। এর মধ্যে সরু গলি দিয়ে দৌড়াতে হয় ৮৪৬ মিটার পথ। শুনতে সহজ মনে হলেও কাজটা কঠিন। কারণ এসময়ই চার হাজার প্রতিযোগীর পেছনে দৌড়াবে ৬টি ষাঁড়।

শক্তিশালী ষাঁড়ের শিংয়ের আঘাতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এমনই মৃত্যুর ঘটনার সাক্ষীও হয়েছে পাম্পলোনাবাসী। তবুও ভিন্নধর্মী এই দৌড় নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই প্রতিযোগী ও দর্শকদের মধ্যে।

প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দেখা যাক কতদূর দৌড়াতে পারি। দৌড়ের জন্য কয়েকদিন ধরে অনুশীলন করেছি।’

দর্শকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। সবাইকে উৎফুল্ল দেখে ভালো লাগছে।’

স্যান ফার্মিন উৎসবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দ্বাদশ শতকে পাম্পলোনায় প্রথমবারের মতো শুরু হয় বুল রান। যদিও তখন এটি কোনো প্রতিযোগিতা ছিলো না। লড়াইয়ের জন্য ষাঁড়গুলোকে মাঠে নেয়ার সময় আশপাশে লেগে থাকতো মানুষের ভিড়। অনেক সময় শিশু কিশোররা দৌড়াতো ষাঁড়ের চারপাশ দিয়ে। সময়ের বিবর্তনে এটি পরিণত হয় প্রতিযোগিতায়।

স্পেনের প্রত্যন্ত শহরটির প্রতিযোগিতাকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের। নোবেলজয়ী মার্কিন লেখক তার জনপ্রিয় উপন্যাস দ্য সান অলসো রাইজেস এ নাটকীয় লেখনীতে তুলে ধরেন বুল রানের ঐতিহ্য। ফলে ধীরে ধীরে পাম্পলোনার উৎসবটি ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাদের মাঝে।

উৎসবের নয় দিনে নগরীতে আগমন ঘটে বাসিন্দার পাঁচগুণ পর্যটকের। একজন পর্যটক গড়ে প্রতিদিন খরচ করেন ১১০ ডলার। তাই প্রায় দুই লাখ অধিবাসীর পাম্পলোনা শহরের অর্থনীতির অন্যতম উৎস বুল রান।

বুল রানকে নিষিদ্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। দৌড়ের সময় হতাহতের পাশাপাশি ২০১৬ সালে এক নারী ধর্ষণকাণ্ড হাওয়া লাগে সমালোচনার পালে। তবে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিযোগিতাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে দেশটির সংবিধানে। তাই আগামীতেও আলোচনা-সমালোচনার আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিত থাকবে পাম্পলোনার বুল রান।

এসএস