হামলা-পাল্টা হামলায় রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। লড়াইয়ের ময়দানে পাল্লা দিয়ে সফলতার দাবি করছে দুইপক্ষই। আক্রমণে ড্রোনের ব্যবহারও বাড়ানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার অস্ত্র এবং সামরিক স্থাপনাসহ ১২টি স্থানে আঘাত হানার দাবি করছে কিয়েভ। অন্যদিকে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খারকিভের তিনটি বসতি নিয়ন্ত্রণের দাবি মস্কোর।
কেবল হামলা নয়, আক্রমণ প্রতিহতেরও পাল্টা-পাল্টি দাবি করছে মস্কো-কিয়েভ। এদিন ১২২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রুশ বাহিনীর। বিপরীতে রাশিয়ার ৬৪টি ড্রোনের মধ্যে ৩৬টি ভূপাতিত করার দাবি ইউক্রেনীয় বাহিনীর।
যুদ্ধের তিন বছর পরও এমন উত্তেজনার মধ্যে সরকারে বড় ধরনের রদবদল আনলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কোকে করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী। নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধের মধ্যেও তার সরকার ইউক্রেনের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে- সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরে দৃঢ়ভাবে কাজ করবে।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কো বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের স্বাধীনতা এবং জীবন রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সকল উপকরণ নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা এই কাজটি সম্পন্ন করব।’
নতুন ইউক্রেনীয় সরকার প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র উৎপাদনে অংশীদারদের সাথে চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেবে বলে জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া ওয়াশিংটন এবং কিয়েভ একটি সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক অস্ত্র ক্রয় চুক্তি বিবেচনা করছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের নিজস্ব শক্তির আরও বেশি প্রয়োজন। আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। আমরা এমনভাবে এগোচ্ছি যা সেনাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে। বর্তমানে আমাদের সেনাদের হাতে থাকা প্রায় ৪০ শতাংশ অস্ত্র ইউক্রেনে উৎপাদিত। আগামীতে তা আরও বাড়বে।’
এদিকে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য গেল সোমবার মস্কোকে ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে কিয়েভের জন্য আরও অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ন্যাটো নিশ্চিত করেছে, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে পাওয়া প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম চালানটি ইউক্রেনে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ন্যাটো যদি ইউক্রেন যুদ্ধকে উসকে দিতে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পশ্চিমা বিশ্বে হামলা চালানো ছাড়া রাশিয়ার আর কোন বিকল্প থাকবে না। এমনকি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ট্রাম্প শান্তি প্রচেষ্টা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রাশিয়ার।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘আমারা আলটিমেটাম, ব্ল্যাকমেইল এবং হুমকি স্বরূপ কোন ভাষাকে পাত্তা দেই না। আমরা আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেব। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য অর্জনের আমরা আরও গুরুত্ব দেবো।’
এমন উত্তেজনার মধ্যেও তুরস্কে হওয়া বন্দি বিনিময় এবং নিহত সেনাদের মরদেহ বিনিময় অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৯ রুশ সেনার মরদেহের বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ইউক্রেনীয় সেনার মরদেহ হস্তান্তর করেছে রাশিয়া।