গেল মার্চে প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে একটি বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, ইউক্রেনের তুলনায় সেনাবাহিনীতে দ্বিগুণ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে মস্কো। যাদের কেউ কেউ প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি যোগ দিচ্ছেন রুশ সেনাবাহিনীতে, বাকিরা কাজ করছেন প্রতিরক্ষা বিভাগের নানা পদে।
এর একমাস পর, গেল এপ্রিলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করেন, চলতি বছর ইউক্রেনে নতুন করে দেড় লাখ সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের একটি প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে রুশ সেনাবাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে আসছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিভাগের দাবি, যুদ্ধ শুরুর পর এখনও পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি সেনাসদস্য হারিয়েছে রাশিয়া। মস্কো এ তথ্য গোপন করলেও পশ্চিমা ওয়াচডগদের পর্যবেক্ষণ এ তথ্য সমর্থন করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রণক্ষেত্রে বড় যুদ্ধযান ব্যবহার কমিয়ে পদাতিক সৈন্য ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এতে করে কিয়েভের ড্রোন হামলার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে ভারি যুদ্ধযান।
ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর, রুশ সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছায় যোগ দেয় পার্শ্ববর্তী দেশ জর্জিয়া ও মঙ্গোলিয়ার তরুণরা। পরবর্তীতে উত্তর কোরিয়া থেকে সেনা সদস্য আনে মস্কো। এছাড়াও বর্তমানে পুরুষ নাগরিকদের কখনও উৎসাহ আবার কখনও চাপ দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীতে কাজ করতে বাধ্য করছে রাশিয়া। আবেদনের পরেও মানসিক বা শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত সৈন্যদের দেয়া হচ্ছে ব্যারাক ছাড়ার ছাড়পত্র।
রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া এক নাগরিক বলেন, ‘২০২৪ এর মে মাসে আমি রুশ সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণ করি। এরপর থেকে ঝড়ের মতো জীবন যাচ্ছে। আমি যুদ্ধ পালাতে চাই না। কিন্তু এ কোম্পানির অংশ হয়ে কাজ করতে পারছি না। কেমারস কোম্পানিতে কাজ করা মানে জুলুমের শিকার হওয়া।’
আরও পড়ুন:
অন্য একজন বলেন, ‘আমার মতো যারা যুদ্ধ করছেন তাদের উদ্দেশে ভিডিও বানাচ্ছি এটা দেখলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। এমনভাবে ঘটনা সাজানো হবে যা দেখলে মনে হবে, আমি যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছি বা আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একজনের মা বলেন, ‘আমার ছেলে যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তাকে ৩৭ হাজার ডলার দেয়া হয়। কিছুদিন পর আমার ছেলের কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার এর ভাগ চেয়ে বসেন। সে রাজি না হওয়ায় তাকে ধরে জেলে পাঠানো হয়েছে।’
গেল বছর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া সদস্যদের প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বোনাস দেয় পুতিন প্রশাসন। যদিও তা দ্বিগুণের প্রস্তাব করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা দাবি করছে, আর্থিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, ছোট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ও পুলিশের নজরে থাকা রুশ নাগরিকদেরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে রুশ সেনাবাহিনীতে।
এ অভিযোগের সঙ্গে একটি পরিসংখ্যানও হাজির করেছে আল জাজিরা। যেখানে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর গেল দুই বছরে রাশিয়ার কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমেছে বিস্ময়কর হারে। এমনকি দেশটির অধিকাংশ সংশোধনাগার এখন বন্ধের পথে এমন তথ্যও হাজির করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।