দুদিন পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি কোথায় আছেন খামেনি

মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রকাশ্যে না আসায় ইরানজুড়ে উদ্বেগের মধ্যেই বুধবার (২৫ জুন) প্রচার করা হয় নতুন ভিডিওবার্তা। তবে যুদ্ধবিরতিতে দুদিন পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি কোথায় আছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, যখন জনসম্মুখে বেরিয়ে আসবেন, তখন ভিন্ন এক জাতি খুঁজে পাবেন খামেনি। অনেকে এও মনে করছেন যে, আগের চেয়েও আরও কয়েকগুণ জোরালো ভূমিকা নিতে পারে ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রযাত্রাকে হুমকি মনে করে ১৩ জুন আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। ২১ জুন দেশটির তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রও। পাশাপাশি তেল-আবিব-ওয়াশিংটন হুমকি দেয় খামেনি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের। এসবকে পাত্তা না দিয়ে ইসরাইলকেতো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রকেও দাঁতভাঙা জবাব দিতে কাতার ও ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। পরে ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুদ্ধবিরতির পর এখনও জনসম্মুখে আসেননি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সব মিলিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে তিনি। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশবাসী, হচ্ছে খবরের শিরোনাম। ঠিক এমন সময়, বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতি দিয়েছেন খামেনি। এর কিছুক্ষণ পর রেকর্ড করা একটি ভিডিও বার্তাও। যেখানে দৃঢ় কণ্ঠে খামেনি দাবি করেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে ইরান। এমনকি, এই যুদ্ধের মাধ্যমে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে চপেটাঘাত করেছে বলেও মন্তব্য করেন ৮৬ বছর বয়সী নেতা।

সশরীরে সামনে না এলেও খামেনির এই ভিডিও বার্তায় কিছুটা স্বস্তিতে ইরানের জনগণ। যুদ্ধবিরতি হলেও, এখনও ষড়যন্ত্র ও হত্যাচেষ্টার শঙ্কায় তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববাসীর কৌতূহল, ঠিক কবে নাগাদ প্রকাশ্যে আসবেন ইরানের সর্বোচ্চ এ নেতা।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষণধর্মী খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। যেখানে বলা হয়- যখন - অথবা যদি - আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন নতুন চ্যালেঞ্জ কিংবা নতুন যুগেরও মুখোমুখি হতে পারেন খামেনি। কারণ হিসেবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের আক্রমণে পারমাণবিক ও সামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি ছাড়াও অনেক শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা হারিয়েছে ইরান।

প্রশ্ন উঠেছে, ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা নিয়েও। এ অবস্থায় খামেনি শাসনব্যবস্থা কতদিন টিকতে পারবে তা অনুমান করা কঠিন বলে মনে করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার অধ্যাপক লিনা খতিব। তবে এটি শেষের শুরু হতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। অন্যদিকে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী আনসারিরও বলেছেন, 'এটা বেশ স্পষ্ট যে নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে ইরানে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার অধ্যাপক লিনা খতিব বলেন, ‘আলী খামেনি সম্ভবত পুরো অর্থে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শেষ সর্বোচ্চ নেতা হতে পারেন।’

সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক অধ্যাপক আলী আনসারি বলেন, ‘এটা বেশ স্পষ্ট যে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসন্তুষ্টি রয়েছে।’

বিশ্লেষকরা এও বলছেন যে, অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার মাধ্যমে খামেনির শাসনব্যবস্থা পতনের সম্ভাবনা খুবই কম। যদি তাই হতো, তাহলে টানা ৪০ বছর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারতেন না তিনি। তাছাড়া, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পর ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকগোষ্ঠী এখন আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবে বলেও মনে করা হচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ এ নেতা হয়তো, বয়সের দিক বিবেচনা একজন যোগ্য উত্তরসূরি দেখে তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এসএস