নিজেকে প্রশংসায় ভাসালেন ট্রাম্প

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

সমালোচনা ও নিন্দাকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে প্রশংসায় ভাসালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার ১০০ দিন উদযাপন ঘিরে মিশিগানে সমাবেশ করেন তিনি। মার্কিন অর্থনীতি, বাণিজ্য, শুল্কনীতি, অভিবাসী ও সরকারি দক্ষতা বিভাগের কাজের পক্ষে সাফাই গাইলেন ট্রাম্প। চীনের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে বেইজিংয়ের আধিপত্য ঠেকিয়েছেন বলেও দাবি তার। এদিকে, ট্রাম্পের নেতৃত্ব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে।

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের মসনদে বসেই বিশ্ব অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাপটে অনেক দেশের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। কখনো দেশ দখল, কখনো শুল্কারোপের হুমকি, সহায়তা বন্ধসহ নানা হুঁশিয়ারিতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রেখেছেন বিশ্বনেতাদের। পাশাপাশি নিজেকে শান্তির দূত প্রমাণে চলমান গাজা-ইসরাইল ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও তৎপর হতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। যদিও সফলতা এখনো ধরা দেয়নি তাকে।

ক্ষমতার ১০০ দিনে নানা পদক্ষেপের জন্য নিজ দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে মার্কিন অর্থনীতি ও বাণিজ্যে। পরিস্থিতি সামলাতে শুল্কারোপ নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন তিনি। তবে নিজের জনপ্রিয়তা হ্রাসের জরিপগুলো কানেই তোলেননি ট্রাম্প।

নিজের ক্ষমতার এক শ দিন উদযাপনে মঙ্গলবার মিশিগানে সমাবেশ করেন ট্রাম্প। এ সময় জনতার উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, রিপাবলিকানরা সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে, এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্রে মিলিত হয়েছি। মার্কিন ইতিহাসে অন্য যেকোনো প্রশাসনের চেয়ে সবচেয়ে সফল প্রথম ১০০ দিন উদযাপন করছে রিপাবলিকানরা। সবাই বলছে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ১০০ দিনের সেরা শুরু। আমরা সবেমাত্র শুরু করেছি। এখনও কিছুই দেখেনি কেউ।’

ট্রাম্পের দাবি, চীনের ওপর শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে বেইজিংয়ের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছেন তিনি। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে চীনের অত্যধিক প্রভাব বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে সবাই গর্ববোধ করবে। আমার পরিষ্কার বক্তব্য, চীনের ওপর এখন ১৪৫% শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে, যা বিশাল। এ অবস্থায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসতে চায়। তবে এটি হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রিলিয়ন ডলার আসবে।’

মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার এবং কর্মসংস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি। তারপরও ট্রাম্প বলছেন, ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে মার্কিন অর্থনীতি। তার আগের আমলেও দুর্দান্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা। শেয়ার বাজার অস্থির হওয়ার ঘটনাও অস্বীকার করে গেলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘প্রথম মেয়াদে চারটি বছর দুর্দান্ত কেটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বর্তমান অর্থনীতি সর্বশ্রেষ্ঠ। শেয়ার বাজার বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসন আরও ভালো করবে। অন্য জাতির জন্য লড়াই করবে যুক্তরাষ্ট্র।’

সমাবেশে অভিবাসননীতির সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন ট্রাম্প। বলেন, তার আমলে সীমান্তে সংঘর্ষ দেড় লাখ থেকে ৭ হাজারে কমে এসেছে। এরইমধ্যে ৬৫ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ সময় ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের নেতৃত্ব নিয়েও উপহাস করেন ট্রাম্প।

যদিও বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের শাসন ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। মার্কিন জনগণের জীবন আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়েছে। মার্কিন অর্থনীতিকে মন্দার দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে, ট্রাম্পের ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবই করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি এমন কিছু উদ্ভট কাজ করছেন, যার সঙ্গে অনেকে অভ্যস্ত নয়।

সামনের দিনগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও কী পদক্ষেপ নেবেন তা দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।

এসএস