শিক্ষা-গবেষণায় সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য ভূস্বর্গ মার্কিন ভূখণ্ড। ২০২৩/২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্বের ২১০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় সাত শতাংশ বেশি।
একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত করলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে পৌঁছানো মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নথিতে দেখা যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিজেদের দূতাবাসগুলোকে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসার আবেদনকারীদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভিসা আবেদনকারীদের গতিবিধিতে নজরদারি ও যাচাই-বাছাই বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন নির্দেশনা দেবে মন্ত্রণালয়। সমালোচকরা বলছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এসব বিধিনিষেধের করুণ পরিণতি কিছুদিনের মধ্যেই ভোগ করতে শুরু করবে ট্রাম্প প্রশাসন।
সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ম্যাথু উইলসন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যত ধরনের কাজ হয়, সেগুলোর মধ্যে কিছু খাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে স্টেম , আর অনেক হাই-টেক প্রযুক্তি খাত। এসব খাতে অধ্যয়নরত স্নাতক শিক্ষার্থীদের অর্ধেক বা আরও বেশি বিদেশি। আরেকটি হলো অর্থনৈতিক প্রভাব। কারণ সাধারণত এই বিদেশি শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ খরচ প্রদান করে থাকে। তাদের হিসাবের খাতা থেকে বাদ দিলে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই বাজেট ঘাটতি দেখা দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকো, অভ্যন্তরীণ নথিটির খবর প্রথম প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান নির্দেশনার অধীনে ইতোমধ্যে যেসব আবেদনকারীর অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনক্ষণ জানানো হয়েছে, তাদের ভিসা প্রক্রিয়া চালু থাকবে। কিন্তু আবেদন জমা দিয়ে এখনও দূতাবাসে সাক্ষাতের দিন ধার্য হয়নি যাদের, স্থগিত হবে তাদের প্রক্রিয়া। আবার বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পর্যাপ্ত উপস্থিতি না থাকলে তাদের ভিসা বাতিলেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। কট্টর অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অভিবাসী বিতাড়ন ও স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলের মধ্যেই নতুন এ সিদ্ধান্ত জানালো ট্রাম্প প্রশাসন। উচ্চশিক্ষায় এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
ম্যাথু উইলসন বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন আদর্শিক বা রাজনৈতিক মানদণ্ড প্রবর্তন করার চেষ্টা করছে। ডিইআই কর্মসূচির সমাপ্তি দাবি করা এক জিনিস, কিন্তু অনুষদের মধ্যে আদর্শিক ভারসাম্যের মতো বিষয়গুলোও দেখা উচিত। এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেওয়ার পদ্ধতিতে একটি অনেক বড় পরিবর্তন হবে।’
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা চক্ষুশূল ওয়াশিংটনের। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেই সবার আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর খড়গহস্ত হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং ইসরাইলের সমালোচক বিদেশি শিক্ষার্থী শুধু নয়, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া গ্রিন কার্ডধারীদেরও দেশে পাঠাতে দ্বিধা করবে না ট্রাম্প প্রশাসন, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।