যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের খনিজ সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প
উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

শুধু নোবেল পুরস্কার লাভই লক্ষ্য নয়, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের খনিজ সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনের পর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কঙ্গোর কাছ থেকেও বিরল খনিজ সম্পদের চুক্তি করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে সম্পদ বিনিময়ের মাধ্যমে কঙ্গো ও রুয়ান্ডায় শান্তি কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় বিশ্লেষকরা।

এশিয়া থেকে আফ্রিকা, বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে শান্তি ছড়িয়ে দিতে দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাত্র ছয় মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট থামিয়েছেন ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইসরাইল ও থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার মতো বেশ কয়েকটি যুদ্ধ।

এরইমধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে কঙ্গো ও রুয়ান্ডা। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য শিগগিরিই দুই দেশের সরকার প্রধান সফর করছেন হোয়াইট হাউজ। তবে শান্তি স্থাপন নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিরল খনিজ সম্পদ। খোদ ট্রাম্পের বক্তব্যেই উঠে এসেছে এই তথ্য।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাকে পছন্দ করে। তাই আমার সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। তারা আমাকে নিজেদের বিরল খনিজ সম্পদ দিতে চায়। আমি দুই দেশের সরকার প্রধানকে যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছি। তাদের বলেছি, যুদ্ধ শেষ হবার আগ পর্যন্ত তোমাদের কাছ থেকে আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।’

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, দ্বিতীয় মেয়াদে পপুলিস্ট পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনকে গুরুত্ব দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরইমধ্যে যুদ্ধবিরতির বদলে ইউক্রেনের কাছ থেকে দেশটির খনিজের মালিকানা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য বলছে, কঙ্গোর কাছে ২৫ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের রিজার্ভ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ খনিজের মধ্যে লিথিয়াম, কোবাল্ট, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ট্যান্টালাম। মুঠোফোন থেকে শুরু করে কম্পিউটার এমনকি সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে এই খনিজগুলো ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তি খাতে চীনের আধিপত্যকে টেক্কা দিতেই শান্তির বিনিময়ে খনিজের চুক্তি করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেমাফোর আফ্রিকার সম্পাদক ইনকা আডেকোকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকায় লেনদেনের সম্পর্ক তৈরির বিষয় পরিষ্কার করেছে। এমন সম্পর্ক আমরা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে দেখেছি। তারা বলেছে, আমরা তোমাদের সমস্যা থেকে উত্তরণে সহায়তা করবো। কিন্তু বিনিময়ে আমরা কী পাবো?’

এরইমধ্যে কঙ্গো সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, রুয়ান্ডার এম ২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিবে যুক্তরাষ্ট্র। বিপরীতে কঙ্গোর খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও রপ্তানির সুযোগ পাবে মার্কিন প্রতিষ্ঠান। তবে জ্বালানি তেলের বিনিময়ে চীনের সঙ্গে অবকাঠামোগত চুক্তির মাশুল গুনতে হয়েছে অ্যাঙ্গোলাকে। কারণ তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও তার সুফল ভোগ করেছে বেইজিং। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন শান্তি স্থাপনের বিনিময়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিচ্ছে কঙ্গো।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ওঙ্গেল জেলালেম বলেন, ‘চুক্তিটি কী ইতিবাচক অর্থে কঙ্গোকে প্রভাবিত করবে? কারণ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পাবে, তখন কঙ্গোর জনগণের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে, বিষয়টি পুরোপুরি অনিশ্চিত।’

এদিকে রুয়ান্ডার রাজধানীতে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের বিমানবন্দর নির্মাণ করছে কাতার। জাতীয় এয়ারলাইন্সের ৪৯ শতাংশ মালিকানা নেয়ার বিষয়ে চলছে আলোচনা। তাই গুঞ্জন রয়েছে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রক্ষায় ব্যাক চ্যানেলে ওয়াশিংটনকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেছে দোহা। দেশের সম্পদ বিক্রি করে অর্জিত শান্তি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এসএস