পাটের বস্তা মুড়িয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে এক লাঠিতে থাকা ২৭টি মশাল। এরপর আগুন ধরানোর জন্য প্রতিটি মশালের মাথায় দেয়া হয় পোড়া মবিল বা কেরোসিন। দৃশ্যটি ইরাকের শিয়া শহর নাজাফের।
১০ মহররম আশুরার দিন সামনে রেখে ৭ মহররম সকাল থেকেই এমন ব্যস্ত থাকেন ইরাকের শিয়া মুসলিমরা।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমরা বস্তাগুলো টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে মশালের বার্নার তৈরি করি। এটি ইমান হোসেনকে স্বরণে আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি অংশ।’
সন্ধ্যা নামতেই মশাল কাঁধে শিয়া শহর নাজাফে থাকা ইমাম আলীর মাজারের দিকে পদযাত্রা করেন শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ। ঢোল বাজিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে স্বরণ করেন আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট নাতি ইমাম হুসাইনকে। যিনি ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে আশুরার দিনে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন।
ইমাম হুসাইনকে স্বরণে আশুরার তিনদিন আগে থেকেই ইরাকে এমন আয়োজনের রীতি বহু পুরনো। সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে তা নিষিদ্ধ থাকলেও, ২০০৩ সালে তার পতনের পর থেকে আবারও সেই ঐতিহ্যে ফেরেন শিয়ারা।
শিয়াদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মশালটি মূলত এরকম ছিল না। প্রথমে এটি একটি লণ্ঠন ছিল, যা রাস্তাগুলো আলোকিত করত। কারণ তখন বিদ্যুৎ ছিল না। সময়ের সাথে সাথে, এটি মশালে পরিণত হয়। তারপর মশালের সংখ্যা সাত থেকে দশ, বিশ এবং তা বেড়ে ১২৫ টি হয়েছে।’
পৃথিবী শুরুর সময় থেকেই ইসলাম ধর্মে মহররম মাসের ১০ তারিখ বা আশুরার দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একাধিক ঐতিহাসিক ঘটনা দিনটিকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এর মধ্যে প্রথমটিই হলো হযরত আদম আলাইহিস সালামের তাওবা কবুল।
এরপর মাছের পেট থেকে ইউনুস আলাইহিস সালাম -এর মুক্তি, ফেরাউনের জুলুম থেকে মূসা আলাইহিস সালাম -এর মুক্তি এবং সবশেষ ইরাকের কারবালায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’র শাহাদাত বরণ।