ভয়ের আরক নাম এখন মশা। জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে হুমকির মুখে ফেলেছে নাগরিক জীবনকে। এ নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিলেও থেমে নেই সংক্রমণ কিংবা প্রাণহানি।
নগরজুড়ে মশা দমনে ৭৫ বছর আগে গড়ে তোলা হয় ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’। একসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় রয়েছে। তবে দপ্তরটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মশা মারার জন্য নেই আধুনিক সরঞ্জাম, নেই কীটনাশক বা যন্ত্রপাতি কেনার বাজেট, এমনকি নিজস্ব উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে কোনো কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতাও নেই।
এ দপ্তরের অধীনে বর্তমানে ২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত থাকলেও, মাঠপর্যায়ের কর্মীরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনেই যুক্ত। অন্যদিকে দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিতদের কাটছে অলস সময়। নিচ তলার অফিস কক্ষে বসবাস করছেন কেউ কেউ।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চান একে পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে উন্নীত করে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেয়া হোক। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় গবেষণাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাতেও স্বনির্ভর হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হয়নি কেউই।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের জনবল আছে, শুধু কীটনাশক দিলেই কাজ করা যেতে পারে। আমাদের এই কর্মচারীগুলো কিন্তু প্রশিক্ষিত। এরা সবশেষ ১৫ বছর আগে প্রায় যোগদান করেছে। এরা তো জানে কীভাবে কী কাজ করতে হয়।’
বিশেষজ্ঞদের মত, দপ্তরটি সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘মশক নিধনের জন্য খুবই কার্যকর একটা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এটা আমরা যারা ঢাকাবাসী আছি তারা খুবই মনে করি। এটা একটা সময়ে দাবি, এটা নেয়া উচিত। কিন্তু এই কাজটা করতে গিয়ে যেন সরকারের অর্থ বা সময় অপচয় না হয় এবং কাজটা যেন ইফেক্টিভ হয়, এটা আমাদের কথা থাকবে।’
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে এখন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। জ্বর হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রো একটিভ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাইদরি রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গুতে প্রেশারটা অনেক ফল করে এবং এখানেই বেশিরভাগ মানুষ মারা যায়। কিছু কছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্গান ফেইলর হয়। ডেঙ্গু তো বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে হওয়া কোনো রোগ না। এটা হয় ভাইরাসের মাধ্যমে, সুতরাং এখানে এন্টিবায়োটিকের কোনো রোলই নেই। বরং অপ্রয়োজনে যদি অ্যান্টিবায়োটিক যদি ব্যবহার করি সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে।’
এমন অবস্থায়, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভার ওপর শুধু মশা নিধনের দায়িত্ব না রেখে, বরং কেন্দ্রীয়ভাবে মশক নিবারণী দপ্তরকে শক্তিশালী করা দরকার।