শরতের শুভ্রতা ম্লান হলেও হেমন্তের শুষ্ক কাশবন উপাজর্নের সুরে আবেগের ফুল ফোটায় দিনমজুরের চোয়ালে। দিনমজুররা বলেন, কাশবন থেকে আয় ভালোই হচ্ছে। ২০-২৫ দিনের এই কাজে অনেকের উপকার হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকেই ব্যবসায়ীরা কাশ কিনে নিয়ে যায়।
প্রতিদিন ভোরে শ্রমিকরা কাস্তে হাতে শহর পাড়ের খেয়াঘাটে হাজির হন। পরে মহাজনের নৌকায় পাড়ি দেন গন্তব্যে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে বাঘা উপজেলার শেষপ্রান্ত লালপুর পর্যন্ত নদীপথ ৭৫ কিলোমিটার। সেপ্টেম্বর থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করলে বিশাল এ নদীতে জেগে ওঠে ৩৩০-৩৪০ হেক্টর বালুচর, আর তাতে দেখা দেয় কাশবন। অক্টোবর থেকে কাশবনের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। পরে গৃহস্থ নিজস্ব চর ও দখলি জমির কাশবন মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। কাশের ঘনত্ব অনুযায়ী প্রতি বিঘা ২ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বিঘা প্রতি ৮শ’ থেকে ১২শ’ আঁটি কাশের খড় পান মহাজনরা। যার প্রতি আঁটি পাইকারি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। মৌসুমে পাইকারি বাজারে ৩ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাশের বেচাকেনা হয়।
মহাজনরা বলেন, আমরা বিঘা প্রতি কাশবন কিনি, নদী পাড়ের গৃহস্থরা বিক্রি করেন। চরের কাশবন ঘিরে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। আমরাও বেচাবিক্রি করে লাভ করছি।
৭৫ কিলোমিটার নদীপাড়ের অর্ধশত জায়গায় এই শুকনো খড়ের ব্যবসা চলে। এর বেশিরভাগ ক্রেতা মোহনপুর, দূর্গাপুর ও বাগমারার মতো পান বরজ অধ্যুষিত গ্রামগুলো থেকে আসেন। কৃষকের কাছে খড়ের চাহিদা থাকায় প্রতি আঁটিতে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
এই অঞ্চলে পান উৎপাদনে দারুণভাবে সহায়ক হচ্ছে কাশের খড় ব্যবহার। যে কারণে এক সময়ের অবহেলায় পড়ে থাকা কাশের বাণিজ্যিক বেচাকেনা বেড়েছে। রাজশাহীর নয় উপজেলার পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার পানের বরজ আছে। এর পাশাপাশি ধানের বীজতলা, সবজির মাচা, ঘরের চালা ও খামারের বেষ্টনী তৈরিতে এই কাশখড়ের ব্যবহার বাড়ছে।