পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু, নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা ভ্যানগার্ড। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে পুলিশ কতটা বন্ধু হতে পেরেছে? কতটাই বা নিরাপত্তা দিতে পেরেছে প্রজাতন্ত্রের মালিক নামের জনগণকে। নাকি শুধুই ব্যবহৃত হয়েছিল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার অস্ত্র হিসেবে।
জুলাই আন্দোলনের টানা দেড় মাস পুলিশকে দাঁড় করানো হয়েছিল জনগণের মুখোমুখি। মানুষের বুক বিঁধেছিল মানুষেরই করের টাকায় কেনা বন্দুকের গুলি। যার ট্রিগার চাপ দিয়েছিলেন পুলিশ নামের জনগণের সেই বন্ধুই। ৫ আগেস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর নানাভাবেই ছিন্নভিন্ন দেশের মূল এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন প্রেক্ষাপটে শুরু হলো জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে যে গণহত্যা চালিয়েছিল। ওই রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শুরু হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ। পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে সেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠেই পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জানান, স্বৈরাচার সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে সব ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ১৬ বছরের পুলিশের সাথে জনগণের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা কমিয়ে আনাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘স্বৈরাচারের অবৈধ অন্যায় আদের পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জনরোষের মুখে পরে। অনেক সৎ পুলিশ সদস্যদেরও সেজন্য মাশুল দিতে হয়েছে।’
নির্বাচনের আগের সময়টা অত্যন্ত কঠিন। পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। এমন আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যতে কখনও যেন পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী বা অন্যায় কাজে ব্যবহার না করা যায় তার জন্য একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনে আগের এ সময়টা অনেক কঠিন সময়। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল না করতে পারে। আমি আগেও বলেছি, আবারও আপনাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি।’
এসময় রাজপথের যেকোনো আন্দোলনে পুলিশকে গত ৮ মাসের মতো ধৈর্যের পরিচয় দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিগত ১৬ বছরে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কমিয়ে আনা। পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমি বলবো এটা কঠিন না, একবার সে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে এ বন্ধন অটুট থাকবে।’
অনুষ্ঠানে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার ৬২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক-বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-পিপিএম প্রদান করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পদক দেয়া হয়েছিল ৪০০ জনকে।