বরষার প্রথম দিন আজ; নগরবাসীর স্বস্তি হারায় সড়কের খোঁড়াখুঁড়িতে

বর্ষায় রাজধানীর সড়কগুলোর বেহাল দশা
দেশে এখন
0

বর্ষার প্রথম দিন আজ। দাবদাহ পেরিয়ে বরিষধারা স্বস্তি নিয়ে এসেছে নগরবাসীর জীবনে। গাছের ভেজা সবুজ পাতা আর মেঘলা আকাশ মনকে প্রশান্তি দিলেও রাজধানীবাসী কিছুটা আতঙ্কিত থাকে এই আষাঢ়েই। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একই সড়কে বারবার খোঁড়াখুঁড়ি, মুষলধারে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, সড়কের খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে বাড়ে দুর্ভোগ। কবে কাটবে নগরবাসীর বর্ষা জর্জরিত এই দুর্দশা?

বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে আনন্দে যদি কাপে তোমার হৃদয়, সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়। বৃষ্টি-বন্দনা ভালোবাসে অথচ আষাঢ়ের পহেলা দিনে এই গান মনে বাজে না এমন কি কোনো প্রেমিক আছে? অথবা আছে কি কেউ যার মনে পরে না রবি ঠাকুরের লেখা?

‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরষায়, এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে-তপনহীন ঘন তমসায়?’

বৃষ্টিকে ভালোবাসা শিখিয়েছিলেন এই কবি-সাহিত্যিকরাই। তবে ভালোবাসার কতটুকু উপলব্ধি করতে পারেন ব্যস্ত নগরবাসী? গরম দূর করে, বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড দাবদাহের মাঝে বৃষ্টি দু’দণ্ড স্বস্তির পরশ আনলেও রাজধানীবাসীর কাছে বৃষ্টি এক আতঙ্ক আর ভোগান্তির নাম।

প্রতিবছর সড়ক সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, সড়কে যানবাহন সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সবই যেন এক বর্ষণমুখর দিনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে ঢাকাবাসীর কপালে।

কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বলেন, ‘ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি এরিয়া ছাড়া প্রায় সমস্ত এলাকাতেই এই খোঁড়াখুঁড়ি-কাটাকাটি বর্ষায় শুরু হয়। কেন এই মৌসুমটাকেই বেছে নেয়া হয় এসবের জন্য, তা আমাদের বোধগম্য নয়। নগরে বৃষ্টি হবে, সেটা তো আমরা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবো না। আমাদের যেহেতু বর্ষা একটি প্রধান ঋতু, এ ঋতুতে বৃষ্টি হওয়াটাই খুবই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা তো আমাদের উন্নতি করা দরকার।’

বৃষ্টির মাত্রা যতই বাড়তে থাকে, বাড়ে জলাবদ্ধতা, সড়কে যানজট। এ ছাড়াও শহরে ড্রেনগুলোর মুখ বন্ধ রাখায় মুষলধারে বৃষ্টিতে প্লাস্টিক, পলিথিন, বোতল, কাগজসহ নানান ময়লা আবর্জনা ড্রেনে পরে থাকায় পানি নামতে পারে না।

এই ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা, ড্রেন পরিষ্কার না রাখা, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য লোক দেখানো ও পরিকল্পনাহীন খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নাগরিক দুর্ভোগের অপর নাম এখন বর্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন নগরবিদরা।

নগরবিদ ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যারা রাজধানী উন্নয়নের দায়িত্বটা নিয়েছেন, তারা একটা পরিকল্পিত নগরীর শুধু আবাসন ব্যবস্থা না, তার সঙ্গে ইউটিলিটি লাইনের পরিষেবাগুলো দেয়ার জন্য যে কমন ডাক্টিং ফ্যাসিলিটি লাগে, সেটা কখনো তারা ভাবেননি। এ ফলে এখন প্রতিটি সংস্থা দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে যখন ফান্ড রিলিজ হয় তারপরই কিন্তু মেয়রের কাছে অনুমোদন নিয়ে তারা বর্ষা বা শীত যখনই অনুমোদনটা পান, তখনই কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন।’

এরপরও প্রকৃতির বুকে বর্ষা আসে ধুলা-ময়লা ধুয়ে দিতে, পাতে ওঠে ইলিশ-খিচুড়ি। কোনো এক ছুটির দিনের অলস দুপুরে এভাবেই নগরবাসীর জন্য বৃষ্টি উপভোগেরও হয় কখনো কখনো।

এসএইচ