যেখানে ভিড়তো নৌকা; সেখানে এখন বালুর স্তূপ আর স্টেডিয়াম

দেশে এখন
0

সাভারের ভাগলপুরে ধলেশ্বরী নদীর বুক চিরে গড়ে উঠেছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। সরকারি কাগজে যেটি খাসজমি, বাস্তবে স্টেডিয়ামটি বড় অংশই নদীর জমি দখল করে নির্মাণ হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে নদীর তীরে নয়, নদী ভরাট করেই গড়ে তোলা হয় স্থাপনা। একসময় যেখানে নৌকা ভিড়তো, সেখানে এখন স্থাপনা আর বালুর স্তূপ।

ঢাকার সাভার উপজেলার ভাগলপুরে ধলেশ্বরী নদীর বুকে গড়ে উঠেছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। নদীর তীর ঘেঁষে নয়, সরাসরি নদীর বুকে নির্মিত এই স্টেডিয়াম ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সরকারি হিসাব বলছে, নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল দুই একর ছয় শতক খাসজমি, অথচ বাস্তবে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে। যার মধ্যে ৯৪ শতকই ধলেশ্বরী নদীর জায়গা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের পাশে গড়ে উঠেছে স্থাপনা, ভরাট করা হয়েছে নদীর পাড়। স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি এলাকায় যেখানে বর্ষায় নৌকা ভিড়ত, সেখানেই এখন বালু ফেলে বসানো হয়েছে দোকান। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর জায়গা দখল করে শেখ রাসেলের নামে মিনি স্টেডিয়াম গড়ে তোলায় এলাকাবাসীও নদী দখলে উৎসাহ পাচ্ছেন।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘নদী দখল করে যে স্টেডিয়ামটা বানাইছে। এটা তো সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার। এটা আওয়ামী লীগের সময়ে জোর-জবরদস্তি করে করা হয়েছে। নদীর জন্য এটা তো এখন সমস্যা হয়ে গেছে।’

নদী দখল করে স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার জহিরুল আলম।

তিনি বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় ওখানে তিন একর জায়গার ওপর এই স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। যদিও সেখানে সরকারি খাস জমি আছে দুই একর ছয় শতাংশ। বাকিটা নদী তীরবর্তী জায়গা নিয়ে এই তিন একর জায়গার ওপর করেছেন।’

পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ধারা চলমান থাকলে বংশী ও ধলেশ্বরী নদী মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বেশি দিন লাগবে না। নদী দখল রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন খান নঈম বলেন, ‘এই যে দখল হয়ে গেলো, কিছু ব্যক্তিগতভাবে, কিছু সরকারিভাবে। ‍কিছু প্রজেক্ট তো আমাদের চোখের সামনে হয়েছে, স্টেডিয়াম এবং ট্যানারি। আমরা বহুবার বহু চিৎকার করেছি, বহু স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। দায় নিয়ে জোড়ালোভাবে বলতে চাই যে, এর একটা সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।’

নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ সাভারের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, ‘এটা যেন দখলমুক্ত করে জনস্বার্থে ব্যবহার করা যায়, নদীর যে স্বাভাবিক প্রবাহ আছে সে জায়গাটাকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা নাব্যতাকে নিশ্চিত করতে চাই।’

এদিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আবুবকর সরকার জানান আদালত ও সরকারি নির্দেশনা পেলে নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আবুবকর সরকার বলেন, ‘যদি কোনো অবৈধ দখল হয়ে থাকে এবং আদালতের যদি কোনো স্পেসিফিক দেশ থেকে থাকে তাহলে উপজেলা প্রশাসন হিসেবে অবশ্যই আমরা দখলদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

নদী দখল ঠেকাতে প্রশাসন ও আদালতের নির্দেশ অমান্য হলে হুমকির মুখে পড়বে সাভারের নদী ও পরিবেশ। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয় সাধারণ জনগোষ্ঠীর।

এসএস