ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ; রোজার আগেই হতে পারে ভোট

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
দেশে এখন
0

সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ হলে আসন্ন রোজার আগেই (২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এজন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ (বুধবার, ৯ জুলাই) সন্ধ্যায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা জানান। এসময় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ হলে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আজ উপদেষ্টা পরিষদে প্রায় ২ ঘণ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মিটিং হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম নির্দেশনা ছিল আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তুতি। নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের আগে শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডের ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী মাসগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও কঠোর হতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

আরও পড়ুন

শফিকুল আলম বলেন, ‘ভোটের আগে যে কোনো ধরনের ভায়োলেন্সকে যেন প্রতিহত করা যায় এবং ভোটের পরেও আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে সেটা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওদের রদবদল করার কথা বলা হয়েছে। রিশাপলটা কীভাবে করা হবে, এটা একটা র‌্যান্ডম ওয়েতে করবে।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে ডেপ্লয়েড হবে এটা একটা ইস্যু, কোথায় কোথায় ডেপ্লয়েড হবে। আপনারা জানেন যে বর্ডার এরিয়াতে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, সারাদেশের বিভিন্ন রকম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, কতজন আনসার থাকবেন, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবেন, বিজিবি বা সেনাবাহিনী কীভাবে থাকবেন, স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবেন, সেগুলো নিয়ে আজকের এই মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আবার নতুন ভোট দেবেন। শেখ হাসিনা আমলের তিন নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। ১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সীদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা করা এবং তাদের জন্য নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে আলাদা ভোটিং বুথ রাখার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অবশ্যই লজিস্টিক্যাল একটা বিষয়, সেটা যাতে তারা খতিয়ে দেখেন, এটা কীভাবে এনশিওর করা যায় তা দেখতে বলেছেন।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘আনুমানিক ৪৭ হাজার ভোটিং কেন্দ্রের মধ্যে ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করা যায়, সেই নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন। পুলিশের বডি ক্যামেরা রাখার জন্য এবং প্রত্যেকটি কেন্দ্র যাতে সিসি টিভির আওতায় আসে, সেটার একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিসিটিভির মনিটরিংটা যেন ঠিকমতো হয়, সেটার জন্য প্রশিক্ষণ এবং তা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেক সময় এই ভোট বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাদের কীভাবে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে আজকের নির্দেশনা এসেছে। আগে নির্বাচনের সময় ৪ দিন পুলিশ বা সিকিউরিটি ফোর্স মোতায়েন থাকতো। এবার বলা হয়েছে, এটা কীভাবে ৭ দিনের জন্য ডেপ্লয়মেন্ট করা যায়, যাতে ভোটের আগে যে কোনো ধরনের ভায়োলেন্স প্রতিহত করা যায় এবং ভোটের পরেও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি নারী ভোটারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং মিডিয়ার জন্য আগাম নীতিমালা তৈরির কথাও হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে ভালো নির্বাচন হয়নি। এবার যেন সবাই অংশ নিতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন হলে নির্বাচন রিহার্সালের কথাও ভাবা হচ্ছে।’

এনএইচ