ড্রোন শোয়ে আন্দোলনের চিত্র, সম্মান জানানো হলো জুলাই যোদ্ধাসহ সর্বস্তরের নারীদের

জুলাই উইমেন ডে ড্রোন শো
দেশে এখন
0

জুলাইয়ের গল্পগাঁথা, আর তার পেছনের ১৫ বছরের গুম, খুন, রাতের ভোট কিংবা অর্থপাচার। হঠাৎই দৃশ্যমান হলো রাতের আঁধার ফুড়ে। মনোমুগ্ধকর ড্রোন শোয়ে তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের পুনর্জাগরণের ভিত্তি জুলাইয়ের খণ্ডচিত্র। জুলাই উইমেন ডে' উপলক্ষে ছিল আরও নানা আয়োজন। সম্মান জানানো হলো জুলাই যোদ্ধাসহ সর্বস্তরের নারীদের।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের আকাশে দেখা মিললো বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর। ১৩ বছর ২ মাস ২৮ দিন ধরে যার পরিবার অপেক্ষায়, তিনি ফিরবেন বলে।

ভেসে উঠলো জামায়াত নেতার ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের ছবি, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান অন্য অনেক অন্ধকারের আয়নাঘরের বন্দির মত তাকেও সুযোগ করে দিয়েছে দু'চোখ ভরে পৃথিবী দেখার।

'প্রিলিউড টু জুলাই' নামের এই ড্রোন শো'তে একে একে দেখানো হলো গেল দেড় দশকে স্বৈরাচারের প্রতিটি জুলুমের প্লট। চরমভাবে নিপীড়িত জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যেভাবে লাভা হয়ে ঝরেছিল অগ্নিঝরা জুলাইয়ে। শুরুর দৃশ্যপট, বিডিআর হত্যাযজ্ঞ।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সেনবাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তাদের নির্বিচারে হত্যার যে ঘটনা কূটনীতি এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে দুর্বল করে দিয়েছিলো বাংলাদেশকে।

এরপর একে একে দৃশ্যপটে গুমের শিকার মাইকেল আর সুমনও। উপস্থিত দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হলো, অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট নামের, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ভয়াল সে রাতে।

২০১৩ সালের ৫ মের যে রাতে শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়া হেফাজত কর্মীদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে পতিত স্বৈরাচার চালিয়েছিল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সবগুলো বিভাগকে ব্যবহার করে।

দেখা গেল ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিবাদ করার অপরাধে ছাত্রলীগের হাতে শহিদ আবরার ফাহাদকে, পরাধীন সময়ে পরিচালিত অর্থপাচার, লুটপাটতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি।

'লাইলাতুল ইলেকশন' খ্যাত রাতের ভোট, ফেইসবুকে প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের হুমকি, 'পোস্ট ডিলেট করো, সমস্যা হবে' কিংবা জুলাইকে বিপ্লবে রূপ দেবার স্বৈরাচারের কটূক্তি কিংবা নির্ঘুম রাত। যত্ন করে দুই হাজার ড্রোন যখন ঢাকার আকাশে আকছিলো সেসব ছবি, তখন পুরো এলাকায় কেবলই হর্ষধ্বনি, যেন জুলাইয়ের অনুভবে ফিরে যাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

অবশ্য গোধূলি থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বগুলোতেও জুলাই ছিল উজ্জীবিত। প্রামাণ্যচিত্র, গান, কবিতা, গল্প আর স্লোগানে বর্ষা বিপ্লবের ছবিই আকা হয়েছে এখানে টানা ৫ ঘণ্টা ধরে। জুলাইয়ের বাঁধভাঙা নারীদের কণ্ঠে কিছু ক্ষোভ তো ছিলই।

নারীদের একজন বলেন, ‘এক বছর পরে এসেও আমি কেন বিচার পাইনি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমি ফেসবুক লাইভে গিয়ে বলেছিলাম আজকের রাত যদি ২৫ মার্চ হয় তাহলে যেন ২৬ মার্চ আসে।’

উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলছেন, এই আয়োজন সর্ব স্তরের নারীদের প্রতি সম্মান। শিক্ষক, অভিভাবক যারা ছিলেন, তারা বলছেন, জুলাইকে হারাতে দেয়া যাবে না।

উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলেন, ‘জুলাই উইমেনদেরকে সেলিব্রেট করা। কারণ তারা আমাদেরকে দ্বিশা দেখিয়েছে। এই নারীরা আমাদেরকে মুক্তির রাস্তা দেখিয়েছে।’

১৪ জুলাই মধ্যরাতে, হাজারো শহিদের আত্মদান, জুলাই যোদ্ধাদের গল্প আর জন মানুষের সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক জুলাইয়ের অনুভব নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ছাড়ে শহিদ মিনারে জড়ো হওয়া এসব মানুষেরা।

এ আয়োজনটি মূলত সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অবদান স্বীকার করার একটা স্মারকসরূপ। কিন্তু এখানে যেভাবে স্বৈরাচারের দেড় দশকে ঘটা মানুষের অসহায়ত্ব আর নির্মমতার কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আসা মানুষেরা বলছে, রক্তের জুলাই সম্মান পাক অনাগত বছরগুলোতেও, শতবছর পরেও।

সেজু