এ শহরে বর্ষা মানেই ডাকহরকরার চিঠিতে এক নতুন প্রেমের নিমন্ত্রণ। ভিজে ফুটপাথের স্বপ্নঘেরা এই নগরীর স্নিগ্ধ স্পর্শে বিলাসিতা আর সংগ্রাম সমান্তরালে হাঁটে—কাকতালীয় অথচ অনিবার্য সত্য হয়ে।
নাগরিক কোলাহলের শহরে বর্ষা আসে কদমফুলের ঘ্রাণ মেখে। অবিরাম জলধারায় বাঁধভাঙা উল্লাসে ফোটা-ফোঁটা বৃষ্টি আর সোঁদা মাটির গন্ধে মাতে নাগরিক মন। ছান্দসিক উচ্চারণে জীবন গাঁথাকে তুলে ধরে কবিকণ্ঠ।
শুধু কী কবিতা, আবেগের আর্তি, সুরের অনুরণন, স্মৃতির জোয়ারে প্রেয়সীর অধরা মনকে খোঁজে সুরেলা মন। লাজুক আকাশের আবেগি কান্নায় মেঘের ঘোমটা ভিজে ওঠে, আর সেই সুরে ফিসফিসিয়ে বাঁধা পড়ে গান।
শিল্পীমনের সরল স্বীকারোক্তিতেও সেই বর্ষা বন্দনা। সময়ের অবারিত স্রোতধারায় মূর্ত হয় জীবনের অর্থ। অকপটেই বর্ষার তুলিতে মননের রেখাপাতের কথা বলেন তারা।
সংগীতশিল্পী জাহিদ অন্তু বলেন, ‘বৃষ্টির ওই পাওয়ার আছে যেটা তার দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করে নিয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে বৃষ্টি পছন্দ হতে পারে।’
কবি ও আবৃত্তিকার রেজা তাহসিন বলেন, ‘পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে বর্ষা কেবল নতুন রূপে, নতুন করে সাজায়।’
নান্দনিকতার চর্চায় প্রেম-বিরহ আর যাপিত জীবনে বেঁচে থাকারও চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে বর্ষা। স্বজন, প্রিয়জন ও সঙ্গীর সাথে অবসাদ যাপনে বর্ষা হয়ে ওঠে সেরা আগ্রহ।
শহরে ক্যানভাসে বর্ষার আঁকিবুকিতে স্থান পায় সংগ্রামের দৃশ্যপটও। বৃষ্টি থামলেই নামে ভেজা ডানায় ক্লান্ত পাখিরা বের হয় খাবারের খোঁজে। কাদায় পা ফেলে ক্ষুধার বিরুদ্ধে শুরু হয় এক নীরব যুদ্ধ।
সংগ্রামের এই গল্প শুধু পাখিতেই নয়, শামিল হয় নগরীর ছিন্নমূল মানুষ থেকে দিনমজুর সবাই। রিকশার হ্যান্ডেলে জমে থাকা পানির ফোঁটায় যেন জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখে চালক। কাদা ভাঙা রাস্তায় ক্লান্ত প্যাডেল সাক্ষ্য দেয় জীবনের সংগ্রামের।
রিকশা চালকদের একজন বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টির জন্য গাড়িই চালানো যায় না। আজকের এক সপ্তাহ ধরে এই চলতেছে। কাপড় ভিজে যায় সব। ভাড়াও নেই বেশি।’
হাঁটু পানিতে আটকে যাবার দৃশ্য অহরহ। বেঁচে থাকার জন্যই যেন ধৈর্যের লেজ টেনে লম্বা করেই দিন যাপনে কর্মব্যস্ত নগরবাসী।