ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে তিন দলের অসন্তোষ

ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠক
রাজনীতি
দেশে এখন
0

ঐক্যমত্য কমিশনের দেয়া জাতীয় জুলাই সনদের খসড়ার বিষয়ে তেমন কোনো পর্যবেক্ষণ নেই বিএনপির। তবে এ খসড়াকে অসম্পূর্ণ বলছে জামায়াতে ইসলামী। অসম্পূর্ণ কোনো সনদে এনসিপি সাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব। অন্যদিকে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? পরবর্তী সংসদ, অধ্যাদেশ নাকি গণভোট? তা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।

৩৬ দিনের জুলাই মাস। একটি বিপ্লব, একটি অভ্যুত্থান। এনে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঐতিহাসিক এক সুযোগ। মূলত, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারে যে কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলগুলোর মত দ্বিমত নিয়ে গত প্রায় ৬ মাস থেকে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে নিরলস সংলাপ। এখন পর্যন্ত কি কি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, তা নিয়ে জাতীয় জুলাই সনদ-২০২৫ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু, খসড়া নিয়েই প্রধান প্রধান দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি শুরু হয়ে গেছে।

গত ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৪ পাতার একটি জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া পাঠিয়েছে ঐক্যমত্য কমিশন। খসড়া সনদে ঐক্যমত্য হওয়া বিষয়গুলোর ঘর এখনো ফাঁকা রয়েছে। যদিও এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে, সংসদে হ্যাঁ-না ভোটে স্বাধীনতা থাকবে সংসদ সদস্যদের- এই জাতীয় ১২টি প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ ৪টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি এবং সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। তাই জুলাই সনদে শেষ পর্যন্ত কোন কোন বিষয় যুক্ত হবে, তা নিয়ে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে ৭টি অঙ্গীকারনামা। বিএনপি বলছে, এরমধ্যে এখানে তাদের ছোটোখাটো কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, তবে মোটাদাগে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া দিয়েছে। আমাদের সেটার ওপর কিছু অবজারভেশন আছে। তবে এটা তেমন মেজর কিছু না।’

খসড়া এ সনদে কোনোভাবেই জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ জামায়াত ইসলামীর। তাই, এটিকে অসম্পূর্ণ বলছে দলটি। অন্যদিকে এনসিপিও বলছে, কোনো অসম্পূর্ণ সনদে সাক্ষর করবে না তারা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা একটি ড্রাফট করছি। সেই ড্রাফট আমরা জমা দেবো। যদি সেটার আলোকে জুলাই সনদ তৈরি হয় তাহলে কেবল আমরা সেখানে সিগনেচার করবো। কারণ যে জুলাই সনদ দেয়া হয়েছে তা জুলাইয়ের স্পিরিটকে কন্টেইন করেনি।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘যদি মৌলিক সংস্কারের কোনো বিষয়কে জুলাই সনদের আওতাবহির্ভূত করে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে সেই সনদ জাতির জন্য সর্বাধিক উপকৃত সনদ হিসাবে গৃহীত হবে না। সে কারণেই অপূর্ণাঙ্গ জুলাই সনদে আমরা স্বাক্ষর করবো কি না, তা এখনো আমাদের বিবেচনাধীন।’

খসড়া সনদের অঙ্গীকারনামার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যেই ঐকমত্য বিষয়গুলো সংবিধান ও আইন সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এটিতে বিএনপির কোনো তেমন কোনো আপত্তি না থাকলেও জামায়াত বলছে, সংস্কার বাস্তবায়নে হয় অধ্যাদেশ- না হয় গণভোট।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘অধ্যাদেশের মাধ্যমে এগুলো বৈধ করার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে আছে। আমরা সেভাবেই এটাকে আইনিভিত্তি দেয়ার পক্ষে। যদি সেভাবেও করার ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকে তাহলে আমরা বলবো এটাকে গণভোটে দেয়া এবং জনগণই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোন কোন জায়গায় ঐক্যমত্য হলাম এবং কোন কোন জায়গায় নোট অব ডিসেনসহ ঐক্যমত্য হলাম এগুলো দেখার পরে সনদ তৈরি হবে। উনারা খুব দ্রুততার সাথে কাজ করছেন। আমরাও খুব আন্তরিকতার সাথে সেগুলো দেখছি। যেগুলো জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আসবে সেগুলো দেখে আমরা সই করবো।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘লিগ্যাল ফিলামা কোয়ার্টারের মধ্য দিয়ে সেটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটাকে দূরবর্তী কোনো সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে এরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখার পক্ষপাতী নই আমরা।’

তবে ঐক্যমত্য কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ,মতামতের ভিত্তিতে খসড়া সনদ সংশোধিত হতে পারে। এক্ষেত্রে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদী ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের তো কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই যে কোনটা সম্পূর্ণ আর কোনটা অসম্পূর্ণ। তো যেটা হবে সেটাই সম্পূর্ণ। কারণ এটা তো অতীতে কেউ কোনদিন করেনি। আমি আশাবাদী যে এ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা জাতীয় সনদ করার ব্যাপারে একমত হবো। কী কী বিষয় এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, সে বিষয়েও একমত হতে পারবো।’

তবে যেসব বিষয় এখনো রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেনি, সেগুলোকে বাইরে রেখে জুলাই সনদ ঘোষণা করলে সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইএ