বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি দাবি করছে, কিন্তু এটা তো সংবিধানে নেই: সিইসি

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে  প্রধান নির্বাচন কমিশনার
দেশে এখন
2

রাজনৈতিক দলগুলো পিআর পদ্ধতি দাবি করলেও এটি সংবিধানে নেই বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করছে। কিন্তু এটা তো আমাদের সংবিধানে নেই। কোনো আইনেও নেই। আমরা শাসনতন্ত্র এবং আইন দ্বারা পরিচালিত। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না।’ আজ (শনিবার, ২৩ আগস্ট) সকালে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন হবে কি, হবে না! আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যের ভেতরে যেতে চাই না। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী নির্বাচন এগিয়ে যাবে। যদি এমন কোনো আইন হয়, শাসনতন্ত্র পরিবর্তন হয় তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন এটা রাজনৈতিক আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই আছে। এ রাজনৈতিক আলোচনা ও তর্ক বিতর্কের মধ্যে নির্বাচন কমিশন যেতে চায় না। আমাদের কাজ নির্বাচন দেয়া। আমরা সেটুকু করবো।’

সব দল নির্বাচনে আসবে কি না, তা সময় বলে দেবে। আওয়ামী লীগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ‘যে দলটার (আওয়ামী লীগ) কথা বললেন, সেই দলের তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। সুতরাং বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের রায় কী আসে সেটা দেখতে হবে আমাদের।’

কোনো ধরনের চাপ দেয়া হলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দিনশেষে সকলেই আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিগত নির্বাচনে যারা প্রভাব বিস্তার করেছে, তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে না। এ সরকার আমাকে চাপ দিলে আমি সরে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘এ সংসদ নির্বাচনের আয়োজনে যাবতীয় কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া তৈরি হয়েছে।’

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তার উচিত জবাব দেয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সুন্দর নির্বাচনের জন্য যাকে যেখানে পদায়ন দরকার, তা করা হবে। ভোট আসতে আসতে দেশের আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে, অস্ত্র উদ্ধার হবে। শুধু একটা দুঃসংবাদ দিতে চাই, যারা ভোট কেন্দ্র দখল করতে চাইবে, ব্যালট বক্স দখল করতে চাইবে—তাদের অবস্থা খারাপ হবে। তারা ঘুঘু দেখেছে কিন্তু ফাঁদ দেখেনি।’

আরও পড়ুন:

যদি কোথাও ভোটকেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রে কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে— প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘যারা অস্ত্রবাজী করে ভোটে জিততে চাইবেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ। যারা ভোট কেন্দ্র দখলের আশায় আছেন, তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। তাদের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে। ভোটকেন্দ্র দখল করে জেতার সুযোগ দেয়া হবে না। কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হলে পুরো কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেয়া হবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার রোধে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে এআই দিয়ে অপপ্রচার রুখে দেয়া হবে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান তিনি বলেন, ‘সরকারের সকল বিভাগ, যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট— তারা ডিসেম্বরের মধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবে। সেনাবাহিনী আরও স্বক্রিয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অংশ নেবে। এয়ার ফোর্স, নৌসহ সব বাহিনী সংযুক্ত থাকবে।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা ১৮ কোটি জনগণের পক্ষে, আমরা কোনো দলের পক্ষে না। আমাদের হুকুম যাবে আইনকানুন অনুযায়ী। আমি এখানে এসেছি সেই কথা জানাতে, আমাদের কাছে কারো আবদার যাবে না।’

আগামী সপ্তাহে রোডম্যাপ প্রকাশের বিষয়ে আশা ব্যক্ত করে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ সপ্তাহে সংসদ সীমানা নিয়ে শুনানি চলবে। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ চলছে। আমরা রোডম্যাপ নয়, আমরা কর্মপরিকল্পনা বলি। আমরা চেষ্টা করবো আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেটা প্রকাশ করার।’

তিনি বলেন, ‘আগামী রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন সম্পন্ন করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকার আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ হবে।’

সেজু