খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়: জামায়াত আমির

লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের জনসভায় জামায়াত আমির
এখন জনপদে
রাজনীতি
0

জুলাই বিপ্লবে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় বলে জানালেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সকালে লালমনিরহাটে জেলা জামায়াতের আয়োজনে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, আওয়ামী লীগের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দাবিতে জনসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। জানান, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ পার পায় না।

জুলাই বিপ্লবের পর উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে জামায়াতের প্রথম সমাবেশ। সকাল থেকেই বাড়তে থাকে জনসমাগম। প্রায় দেড়যুগ পর প্রকাশ্য ময়দানে বড় কলেবরের জনসভা হওয়ায় আশপাশের উপজেলা থেকেও নামে নেতাকর্মীদের ঢল।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেয়া নিয়ে দলটি উদারতা দেখালেও ঘোষণা করে রেখেছে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী। তাই লালমনিরহাটের এ সমাবেশ ঘিরে জেলার তিনটি আসনের প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের মধ্যে আমিরের আগমন ঘিরে দেখা যায় ভোটের আমেজ।

শনিবার সকালে শুরু হওয়া সমাবেশে সাড়ে এগারোটার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরু করেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি জানান, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ পার পায় না। বিগত কয়েকমাসে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের সমালোচনা করে তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের বুক থেকে আমরা চিরতরে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে চাই, নির্মূল হয়েছে দেখতে চাই। তারা মানুষকে মানুষই মনে করতো না। ক্ষমতার শেষ দিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাজার হাজার মানুষের বুকে গুলি চালিয়েছে।'

ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে উঠে আসে রাজনীতি, নির্বাচন, সংস্কার ও দেশের স্থিতিশীলতার ইস্যু। বাদ যায়নি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত হত্যা ও বাংলাদেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা। বাংলাদেশ ভালো না থাকলে ভারত ভালো থাকবে কি না সেই হুঁশিয়ারি দেন জামায়াতের আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা তাদের সাথে এখানে পারস্পারিক, শ্রদ্ধা, সমতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বসবাস করতে চাই। আমাদেরকে ভালো থাকতে দিতে হবে। আমাদেরকে ভালো থাকতে না দিলে তারাও ভালো থাকতে পারবে কি না সেটাও তাদেরকে ভাবতে হবে।'

এ সময় তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও খুনিদের বিচারের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াত আমির বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনিদের বিচার। এ বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। আরেকটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার। এই দুইটা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিনয়ের সঙ্গে বলবো, আমরা ইলেকশন চাই, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা চুরি-চামারি, কালো টাকা আর পেশিশক্তির প্রভাবযুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই না। এই কারণে নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে।’

এজন্য সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন জামায়াত আমির।

এ সময় কারাবন্দি জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানান দলের সর্বোচ্চ নেতা। নির্বাচনের আগে জুলাই বিপ্লবের খুনিদের বিচার নিশ্চিত ও প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কারে জামায়াতের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ডা. শফিক।

বিকেলে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি এক নাগরিকের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে ডা. শফিকুর রহমানের।

এসএইচ