আজ (শনিবার, ১২ জুলাই) সকালে নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন করেন, দুই দিন আগের বুধবারের ঘটনা কেন শুক্রবার প্রচার হলো, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।
যুবদল সভাপতি বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। যুবদলকর্মী সোহাগকে প্রকাশ্যে দিবালোকে এরকমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অভিযুক্ত পাঁচজনকে আমরা আজীবনের বহিষ্কার করেছি, তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আহ্বান জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে সিসিটিভি ফুটেজ ও ফুটেছে যাদের দেখা গেছে তাদের মামলায় আসামি করা হয়নি। আমরা জানতে চাই, কেন ফুটেজে দেখা তিনজনকে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনকে আসামি করা হলো? এটা আমরা জানতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে শহিদের রক্ত নিয়ে ব্যবসা না করে আমরা দেশের কাজে ফিরে গেছি। আমরা কোনো মব তৈরি করতে পারি না। আমাদের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে, এর তীব্র নিন্দা জানাই।আমরা কখনো দায় এড়ানোর রাজনীতি করিনি, কোন ঘটনা ঘটলে অস্বীকার করিনি। যেকোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
মুন্না বলেন, ‘গতকাল খুলনায় যুবদলের এক কর্মীকে রগ কেটে হত্যা করার করারও এখানে কোনো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছি না। আমরা জানি একটি নির্দিষ্ট দলের এই রগ কাটার ইতিহাস রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আইনের স্থিতিশীলতা আনতে বিএনপি নানাভাবে সাহায্য করছে। অপরদিকে আরেকটি অংশ নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে নানারকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। একটি জরিপ পেয়ে যখন তরুণ সমাজের সমর্থন জাতীয়তাবাদী দলের উপরে পড়েছে, তখন একটি গুপ্ত সংগঠন তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে কোনো অগণতান্ত্রিক দল যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিক সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
গত বুধবার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফান কেউ কেউ।
ওই ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহত লাল চাঁদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বর্ণনায় হত্যাকাণ্ডের এমন বিবরণ উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। নিহত লাল চাঁদের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম (৪২) মামলাটি করেন। এতে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
গ্রেপ্তার ৫ জনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন এলাকায় যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। আরেকজন হলেন তারেক রহমান ওরফে রবিন, আরেকজন টিটু। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। তারা হলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী ওরফে পিন্টু (মামলার ১৩ নম্বর আসামি) এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম ওরফে লাকি (১১ নম্বর আসামি)। যুবদলের বহিষ্কার-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। তারা হলেন চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস (১৭ নম্বর আসামি) এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু (১২ নম্বর আসামি)।