আজ (মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে যুব ম্যারাথন অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ সহজ-সরলভাবে ধারণা করেছিল তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু না, যখনই তারা মসনদে বসলেন, তারা আপন রূপে আত্মপ্রকাশ করলেন। আপনাদের মনে থাকার কথা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের নেতাদের তিরস্কার করে, একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে—তোমরা কি হাতে চুরি পরে বসে আছো? তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, আর যদি আমার দলের একটা মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে তার বিনিময়ে দশটা লাশ ফেলে দিতে হবে।
‘এই ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন হুঙ্কার, আস্ফালন। তারা তাই করেছিলেন। সেই সময়ে খালে, বিলে, নদীতে, নালায়, জঙ্গলে, হাটে, মাঠে সর্বত্র মানুষের টুকরা টুকরা লাশ পাওয়া যেত।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, যার পরিণতি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। দেশের মানুষ ভেবেছিল আওয়ামী লীগ এটা থেকে শিক্ষা নেবে।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। এরপর তারা ’৯৬ সালে মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাতে তসবিহ নিয়ে তারা ক্ষমা চায়। ’৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা আবার ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে। এই তিনবারের ক্ষমতায় বাংলাদেশের এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ মারা যায়নি। এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে তাদের হাতে মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়নি। একটা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে নোয়াখালীতে একজন মাকে আওয়ামী লীগ বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছিল।’
একাত্তরের পূর্ব ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একাত্তরে দেশের ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল একবুক আশা আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। বাংলার মানুষ ভেবেছিল প্রিয় দেশটি সব ধরনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে দেশে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী জনগণের কথা রাখেনি।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে সেনাবাহিনীর, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ থাকাকালেও রক্ষীবাহিনী গঠন হয়েছিল। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। মন্ত্রীর ছেলেরা ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে শত শত মানুষের লাশ মাঠেঘাটে পড়েছিল। লাশ দাপনের ব্যবস্থা ছিল না। তারা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে শ্মশানে পরিণত করেছিল। তারপর তাদের কার্যক্রমের ফল হিসেবে তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।’
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতীতের সব বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হবে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে। যেই রাজনীতি হবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পক্ষে, যেই রাজনীতি হবে দুর্নীতির বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, মামলাবাজদের বিপক্ষে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের দলের বিজয় চাই না। আমরা চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের জন্য যারা বাধা দেবে, এই যুবকরা তাদের লাথি মেরে সরিয়ে দেবে।’
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা কোনো আনুকূল্য চাই না। কিন্তু কমিশন যদি কারও প্রতি সামান্য আনুকূল্যও দেখায়, আমরা তা বরদাস্ত করবো না। আমরা চাই আপনারা আপনাদের শপথের আলোকে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন উপহার দিন।’





