এক অভিনব কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। এরপর যা হবার কথা ছিল, তাই হলো। ছব্বিশের জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পরে দেশব্যাপী।
জুলাই সংগঠক সাদিক কাইয়ুম বলেন, ‘জুলাইয়ের শুরু থেকে আমরা বারবার চিন্তা করছিলাম আমরা যে কর্মসূচিগুলো দেবো, সেগুলোতে আমরা শব্দের খেলা খেলার চেষ্টা করবো। আর বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণে অবরোধ-হরতাল লাগাতার দেয়ার কারণে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে সেগুলোর প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছিল। আমরা আলাপ করছিলাম, মাহফুজের সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছিলো, আসিফের সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছিলো যে কী কর্মসূচি দেয়া যায়, প্রথমে আলাপ হয়েছে অবস্থান কর্মসূচি। আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিবো। তখন দ্বিতীয় লেয়ারে হান্নান মাসউদ, রিফাত রশীদ, মাহিন সরকারসহ বাকিরাও ছিল। হান্নান মাসুদ থেকে আসছে, বলছে- ভাই আমরা অবরোধ না বলে, ব্লকেড বলি। একইসঙ্গে এটা বাংলা ব্লকেড। মূলত এ মাধমেই শাহবাগে ৬ জুলাই থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়।’
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে দুপুরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল জড়ো হতে থাকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। মিছিল আর স্লোগানে শাহবাগ, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর, চাঙার পুলসহ পুরো শহর পরিণত হয় অবরোধের নগরীতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু বারবার তাদের মনে করিয়ে দিতে চাইতাম যে আমাদের প্রোগ্রামটি ১২টা থেকে শুরু হচ্ছে বা ১০টায় শুরু হচ্ছে বা বিকেল ৩টায় শুরু হচ্ছে। এই যে, এই কাজগুলো ছিল, শিক্ষার্থীরা তো অনলাইনে আমাদের কর্মসূচিগুলো দেখতো। পাশাপাশি আমরা হলে হলে দাঁড়িয়ে যখন মাইকে প্রোগ্রামের কথা ঘোষণা করতাম তখন তারা সেখানে বেশি স্পেশাল ফিল করতো।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘সাধারণ মানুষের একটা বড় ধরনের সাড়া ছিল এখানে। সাধারণ মানুষ আমাদের ভালোভাবে সাড়া দেয়ার কারণেই আমরা সায়েন্স ল্যাবে ভালোভাবে অবস্থানটা করতে পেরেছি। যখন আমরা এখানে ব্লকেড করতাম তখন চারপাশের রাস্তাঘাট, গাড়িগুলো বন্ধ হয়ে যেত। মানুষ পায়ে হেঁটে এসে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতো।’
ভিন্নধর্মী এ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিত হয় বাংলা ব্লকেড।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, ‘ ফার্মগেটটা তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্লকেড করছিল। আমরা যখন মতিঝিলের ওইদিকে যাচ্ছিলাম তখন দেখতাম নটরডেমের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশিমাত্রায় নেমে এসেছে। সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ সায়েন্স ল্যাবের এদিকে ছিল। ইডেন কলেজের মেয়েরা নীলক্ষেতের দিকে ছিল। প্রত্যেকে আসলে নিজে নিজের দায়িত্বটা ফিল করছিল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতিমা বলেন, ‘৭ তারিখে আমাদের ব্লকেডটা স্বতঃস্ফূর্ত হয়েছিল এবং মানুষ বেড়ে গিয়েছিল। এর কারণ একসঙ্গে সবাই শাহবাগ না এসে যার যার পয়েন্টে গিয়ে আন্দোলন শুরু করে।’
ব্লকেডের বিস্তার, গ্রহণযোগ্যতা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের স্লোগানের দৃঢ়তা নতুন মাত্রা পায় এর মধ্যে দিয়ে। ফলে বাংলা ব্লকেডের হাত ধরে জুলাই বিপ্লব অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।