ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো কি জাতীয় নির্বাচনের মডেল হবে?

জাতীয় সংসদ ভবন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন
দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
1

সদ্য অনুষ্ঠিত ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মডেল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ডাকসুতে কিছু বিচ্যুতি ও জাকসুতে নির্বাচন অব্যবস্থাপনা থাকলেও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই বলে মত বিশ্লেষকদের। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা অর্জন করবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মডেল জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেন তারা।

ডাকসু নির্বাচনকে ধরা হয়েছিলো ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এসিড টেস্ট। শুধু ডাকসুই নয়, সদ্য অনুষ্ঠিত জাকসু ও আসন্ন অন্যান্য ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলোও এ পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রায় দেড় দশক ভোটাধিকার বঞ্চিত সাধারণ ভোটারদের নজরও ছিলো ডাকসু ও জাকসুর দিকে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিলো। যার প্রেক্ষিতে দাবি উঠেছিলো নির্বাচনকালীন সরকারের। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও, দুটি ছাত্রসংসদ নির্বাচন স্বচ্ছতা নিয়েই শেষ হয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের। তবুও প্রশ্ন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ কতটা উতরানো গেলো?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘দম বন্ধ পরিবেশ থেকে যখনই ড. ইউনূস এসে দায়িত্ব নিয়েছে তখন সবাই এটার আসার আলো দেখেছে। সবাই আস্থা রেখেছে যে ড. ইউনূস যখন নির্বাচন ঘোষণা করেছেন তখন জনগণ মোটামুটি প্রস্তুত যে ভোট দেবো। তাদের একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। ডাকসু যেহেতু সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, টার বিরুদ্ধে ওইভাবে কোনো অভিযোগও আসেনি। সুতরাং আমাদের প্রান্তিক জনগণের সবার মনে একটা ভরসা তৈরি হয়েছে যে নির্বাচন হয়তো সুন্দরভাবেই হবে।’

ডাকসুর রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা বলেন, ‘আমরা কীভাবে অংশীজনের কাছে পৌঁছেছি। একটা নির্বাচন অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্তস্থ এবং বহিস্থ অংশীজন রয়েছে। আমাদের এখানে অন্তস্থ অংশীজনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন ধরনের যারা আছেন। কিন্তু বহিস্থ অংশীজনও তো কম না। রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্র পক্ষ, সরকার পক্ষ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সুতরাং এ দুইয়ের মধ্যে যে একটা সমন্বয় করা সম্ভব এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেই সমন্বয় করা সম্ভব। সেটা আমার মনে হয় জাতীয় নির্বাচনে অনুসরণ করা সম্ভব।’

আরও পড়ুন:

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে ভাবনায় রেখেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখার চেষ্টা ছিলো বলে জানান সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসুর রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা। এ নির্বাচনকে তিনি ব্যাখ্যা করছেন জাতীয় নির্বাচনের মাইক্রো মডেল হিসেবে।

এস এম শামীম রেজা বলেন, ‘জাতি একটা নির্বাচনের মডেল দেখতে চায়। আমরা মনে করি না যে, আমাদের নির্বাচনটাই পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে হবে জাতীয় নির্বাচনের কাঠামোতে। জাতীয় নির্বাচন তো অনেক বড় আয়োজন। নির্বাচন কমিশন আছে, সচিবালয় আছে, দশকের পর দশক তারা নির্বাচন করেন। আমাদের তো এত বড় আয়োজন নেই। আমরা জাতির এ প্রত্যাশাকে গ্রহণ করেছি। ১৮ কোটি মানুষের যে দৃষ্টি আমাদের দিকে, কাঠামোগতভাবে হয়তো আমরা সেটার উত্তর দিতে পারবো না। কিন্তু একটা মাইক্রো মডেল হিসেবে মনে হয় আমরা শত চাপের মধ্যে থেকেও চেষ্টা করেছি দিতে।’

ডাকসু ও জাকসুর এমন সাফল্যের পর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া ভোটাররাও সরকারের উপর ভরসা পাবেন বলে মনে করছেন, অধ্যাপক জিন্নাত আরা নাজনীন। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মডেল জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেন তিনি।

জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘১৬ বছরে তো আমাদের ইনস্টিটিউট সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন এটুকু সময়ের মধ্যে ইনস্টিটিউট তৈরি করাও সম্ভব না। সেক্ষেত্রে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি মডেল হিসেবে নেয়া হয়, এখানে কীভাবে কীভাবে কাজ হয়েছে, ইচ্ছা করলে এখান থেকেও কিছু মানুষকে নিয়ে যাওয়া যায়। তাদের ওখানে নেয়া হলে আমার মনে হয় নির্বাচনের পুরো প্রসেসটাই ভালো হবে।’

ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলোর মত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত অংশীজনরা আন্তরিক হলে ও প্রার্থীদের আচরণবিধির আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই জাতীয় নির্বাচনেও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব।

এসএস