বুক ভরা সাহস-অধ্যবসায় আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে উতরে যাওয়া যায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। সাঁতরে পাড়ি দেয় যায় ইংলিশ চ্যানেল, হয়তো বা ভেঙে ফেলা সম্ভব প্রবালপ্রাচীর। মুখের ওপর জবাব দেয়া যায় সব সমালোচনার, হয়ে ওঠা যায় মানবসভ্যতার এক ইতিহাস।
ডেভিড গগিনস দ্য টাফেস্ট ম্যান অন আর্থ। এক কথায় পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশ্রমী মানব। কলমের কালি নয়, ঘাম দিয়ে লিখেছেন নিজের জীবনের মহাকাব্য।
স্থূল শরীরে বেড়ে ওঠা সুখকর ছিল না। অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে। এমনকি করতে হয়েছে টয়লেট পরিষ্কারের কাজও। স্বপ্ন ছিল মার্কিন নেভিতে যোগ দেয়া, সেলক্ষ্যে মাত্র ৩ মাসেই ১০৬ পাউন্ড বা ৪৮ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন গগিনস। ভোর সাড়ে ৪টায় দিন শুরু করতেন তিনি, এরপর ২ ঘণ্টা সাঁতার, তারপর জিম এবং দুই ঘণ্টা সাইক্লিং।
বারবার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়েননি ডেভিড গগিনস, যোগ দেন মার্কিন নেভিতে। এরপর অবশ্য হয়েছিলেন দমকল বাহিনীর সদস্য। নেভি সিলের অগ্নিপরীক্ষা খ্যাত টানা ১৩০ ঘণ্টার বিরতিহীন কঠোর শারীরিক পরিশ্রম, যেখানে ৫ দিনে ঘুমের সুযোগ মিলে মাত্র ২ ঘণ্টা। সেখানেও দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের জানান। ২০ বছরের সামরিক জীবনে অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য খেতাব।
অসাধ্য সাধন করতে থাকা এই অ্যাথলেট একসময় জানতে পারেন জন্ম থেকেই হৃদপিন্ডে ছিদ্র নিয়ে চলছেন তিনি। সার্জারির পর সুস্থ হয়ে দৌড়েছেন ৬০টিরও বেশি ম্যারাথন ও আলট্রা ম্যারাথনে। ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৩০টি পুলআপ দিয়ে ভেঙ্গেছেন বিশ্ব রেকর্ড।
আনস্টপেবল ডেভিড গগিনস উপাধি পান হিরো অব রানিং হিসেবে। ৩২০ মাইলের ট্রায়াথলন ৩ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করেছিলেন, হয়েছিলেন দ্বিতীয়। এর মাধ্যমেই বনে গেছেন আয়রন ম্যান। ট্রায়াথলিট গগিনস হিসেবেও তার পরিচিতি বিশ্বজুড়ে।
জীবনের শুরু থেকেই অসংখ্য মানসিক চাপের কারণে একটা সময় জড়তা চলে আসে কথা বলায়ও। এতে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নের পাশাপাশি বর্ণবাদের শিকারও হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গগিনস অবদান রেখেছেন সাহিত্য ক্ষেত্রেও। আত্মজীবনী ক্যান নট হার্ট মি'তে তুলে ধরেছেন নিজের বদলে যাওয়ার গল্প, কীভাবে শ্রমের বিনিময়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন সেরাদের কাতারে।
বিরতিহীনভাবে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিদিন দৌড়ে যাচ্ছেন ডেভিড। নিজেকে পরিচিত করেছেন 'দ্য টাফেস্ট ম্যান অন আর্থ' নামে। যার কাছে জীবন পুরোপুরি একটি মনস্তাত্বিক খেলা। যেখানে মানুষ তার নিজের বিরুদ্ধেই খেলে।