সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। বিকল্প কর্মক্ষেত্র না থাকায় এখানকার অধিকাংশ মানুষই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। নদী খালে মাছ-কাঁকড়া শিকার, বন থেকে মধু ও গোলপাতা আহরণসহ নানান পেশার সঙ্গে জড়িত বনজীবীরা। সম্প্রতি সুন্দরবনে আবারও বনদস্যুদের তৎপরতা বেড়েছে। অপহরণ করে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ। এতে আতঙ্ক নিয়ে বনে প্রবেশ করতে হচ্ছে বনজীবীদের।
সুন্দরবনের পাশেই বসবাস জেলে পরিবারগুলোর। তাদেরই একজন সুন্দরবন তীরের দাতিনাখালী গ্রামের জেলে পল্লীর বাসিন্দা ছায়রা খাতুন। তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে নদীর দিকে পথ চেয়ে।
সুন্দরবনের গহীনে মাছ কাকড়া শিকারে যাওয়া স্বামী ও সন্তানের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। তবে আগে বনে বাঘ কুমিরের ভয় থাকলেও এখন আবারও বনদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছে কিনা সেই শঙ্কায় থাকতে হয় তাকে।
পাশের কালিঞ্চি গ্রামের বনজীবী সুজন মুন্ডা। গত মাসে নৌকা সাজিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বনদস্যুদের কবলে পড়েন তিনি। পরে মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরলেও ভয়ে আর যাওয়া হয়নি সুন্দরবনে। কাজ হারিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটছে তার।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ৪ মাসে সুন্দরবনের নদী খাল থেকে মুক্তিপণের দাবিতে সুজন মুন্ডার মতো অন্তত ৩০ জন বনজীবীকে অপহরণ করে দস্যুরা। আগের মতো বেশ কয়েকটি বনদস্যুর দল সক্রিয় হয়েছে।
অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। দিতে না পারলে চালানো হচ্ছে নির্যাতন। ভয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করছে না ভুক্তভোগীরা। গত ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই এসব অপরাধে জড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রাণবৈচিত্র্য ভরা সুন্দরবনকে 'দস্যুমুক্ত' ঘোষণা করে বিগত সরকার।
সুন্দরবনে অপরাধ বাড়লে একদিকে যেমন বনজীবীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে কমবে রাজস্ব আদায়। এছাড়া কমে আসবে পর্যটকের সংখ্যাও। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, এরইমধ্যে অভিযান চালিয়ে বনদস্যুদের কাছে থেকে ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে । এছাড়া প্রতিনিয়ত অব্যাহত রয়েছে টহল।
নিয়মিত টহলের পাশাপাশি, দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।
এখনই দস্যুদের দমনে ব্যবস্থা না নিলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এ জন্য দস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছে বনজীবীরা।