বরেন্দ্রর কঠিন মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করতে চলছে কৃষকের সংগ্রাম। রাজশাহী-চাঁপাই-নওগাঁসহ পাঁচটি জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল চাষাবাদে পরিশ্রম করতে হয় কৃষককে।
কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির ৮৭ শতাংশের চাহিদা মেটায় ভূগর্ভের পানি। এতে, গেল ৪ দশকে এ অঞ্চলে পানির স্তর প্রায় ৭০ ফুট নিচে নেমেছে।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র এলাকার ১ হাজার ৯৬০টি সেচপাম্প পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি পাম্প দিয়ে ১০০ হেক্টরের পরিবর্তে ৪০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সর্বোচ্চ বছরে ১ হাজার ৯৬০ ঘণ্টা পানি পাম্প করা যাবে। তাহলে এইটা সাসটেইন্যাবল থাকবে নাহল থাকবে না। আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি কোনো কোন টিউবলে সমস্যা রয়েছে।’
উঁচু বরেন্দ্র এলাকার অধিকাংশই ধূসর ফাঁকা, ধান ক্ষেতের সবুজ পড়ে আছে এক কোণে। ভূ-উপরিস্থ পানির আঁধারের পাশজুড়ে কিছু জমিতে আছে বোরোর আবাদ।
অনেক কৃষক বীজতলা করেও পানি সংকটে ধান রোপণ করতে পারেননি। তাতে ২০২৪-২৫ মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর কমে ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।
চাষিদের একজন বলেন, ‘ধান লাগানো যায়নি। এতে আমাদের এই এলাকায় সমস্যা হচ্ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘পানি আমরা পাচ্ছি না। আমাদের যে বড় পাম্প ছিল সেগুলো থেকে ভালো পানি সাপ্লাই দিচ্ছে না।’
এ অবস্থায় পানির ঘাটতিতে বোরো চাষ থেকে সরে আসা কৃষক ঝুঁকছেন বিকল্প শস্যে। তাতে লাভের অঙ্কে ঘাটতির কথা বলছেন তারা।
চাষিদের আরেকজন বলেন, ‘এখন যারা ধান লাগাচ্ছে তাদের ফলন ভালো হবে না।’
তবে হুট করে কৃষককে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থাপনা আর প্রণোদনা বাড়ানোর তাগিদ বরেন্দ্র গবেষকদের।
রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলে, ‘আলু এবং ভুট্টার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যেহেতু পানির পরিমাণ বেশি লাগে তাই বোরো আবাদ কম হচ্ছে।’
রাজশাহী অঞ্চলে চাষাবাদে পানি সরবরাহ নিশ্চিতে নতুন করে খাল খনন করছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এতে ভূ-উপরিস্থ ১৩ শতাংশের পানির জোগান ৩০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশা প্রতিষ্ঠানটির।