চট্টগ্রামে ৬৭ বছরেও হয়নি সরকারি হাসপাতাল

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে রোগীদের ভোগান্তির ছবি
এখন জনপদে
0

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। অথচ গত ৬৭ বছরে এখানে নির্মাণ হয়নি নতুন কোনো সরকারি হাসপাতাল। এজন্য জনপ্রতিনিধি, নীতি-নির্ধারকদের ব্যর্থতাকে দুষছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগীর ঠাঁই হয় হাসপাতালের মেঝে বা বারান্দায়। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মার্ণের তোড়জোড়ে আশার আলো দেখছেন বাসিন্দারা।

শয্যা নেই, তাই রোগীর ঠাঁই হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝেতে। কেউ কেউ আবার সেখানেও জায়গা না পেয়ে বারান্দা বা ওয়ার্ডের সামনে বেড বিছিয়ে করছেন চিকিৎসকের অপেক্ষা। এমন চিত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনের।

বালিশ নেই, বেড ছেঁড়া ও ময়লা, নেই ফ্যান, টয়লেট, কিংবা সুপেয় পানি। ৬৮ বছরের পুরোনো এ হাসপাতালটি এমন জীর্ণ দশা নিয়েই বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় ৩ কোটি মানুষের ভরসাস্থল।

কেন এমন হাল এ হাসপাতালের? ২০২৩ সালে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ লাখ রোগী, গড়ে দিনে সাড়ে চার হাজার। অথচ বছরে বরাদ্দ মাত্র ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। রোগী প্রতি মাত্র ৫০০ টাকার বেশি। যা ঢাকাতো বটেই; ময়মনসিংহ, রাজশাহী মেডিকেল থেকেও কম। বলা যায়, বরাদ্দ, লোকবল, যন্ত্রপাতি স্বল্পতায় জোড়াতালি দিয়ে চলে এ হাসপাতাল। অথচ তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী থেকেও রোগী আসে চট্টগ্রামে।

চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘এই রোগীগুলোকে আমি যদি ব্যাক টু ব্যাক ট্রিটমেন্ট দিতে চাই তাহলে আমাকে যেটা করতে হবে, আমাদের এখানে যেহেতু জায়গা আছে; আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ তৈরি করার জন্য প্রস্তাবনা ইতোমধ্যেই মিনিস্ট্রিতে পাঠিয়েছি। এটা যদি অ্যাপ্রুভ হয় তাহলে আমাদের চিকিৎসা সেবার মান অনেক বাড়বে।’

এর বাইরে নগরীতে সাধারণ মানুষের জন্য কম মূল্যে সরকারি জেনারেল হাসপাতালই ভরসা। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পর গত ৬৭ বছরে বড় আকারে কোনো সরকারি নতুন হাসপাতাল হয়নি চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ দাবির প্রেক্ষিতে এবার নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে নগরীর বাকলিয়া, মোহরা, পটিয়া, হাটহাজারি এলাকায় স্থান পরিদর্শন করেছেন উপদেষ্টা। চীনের অর্থায়নে হতে পারে এ হাসপাতাল।

ন্যাশনাল হাসপাতাল চট্টগ্রাম অ্যান্ড সিগমা ল্যাব লিমিটেডের উপ পরিচালক ডা. মো. আবু নাছের বলেন, ‘জায়গাটা পেলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এটার কাজের ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যথেষ্ট তৎপর আছেন। এটা দ্রুতই হবে বলে মনে হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাটিতে টয়লেটের পাশে এসব রোগী, এভাবে তো হয় না। কাজেই আমরা চাচ্ছি যে এটাকে ডিসেন্ট্রালাইজ করে দিতে, যেন মানুষ সেবাটা সঠিকভাবে পায়।’

চিকিৎসকরা জানান, সরকার নজর দিলে আধুনিক যন্ত্রপাতি, লোকবল দিয়ে ভালো মানের হাসপাতাল চালু সম্ভব।

বিএমএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৩টি হাসপাতাল দরকার, যাতে সবগুলো সেন্ট্রালাইজড না হয়।’

চট্টগ্রামবাসী বলছেন, অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে সরকারিভাবে নতুন হাসপাতাল তৈরি না হওয়া এ অঞ্চলের প্রতি অবহেলা ও বৈষ্যেমের চিত্রই তুলে ধরে। এখনো অসুস্থ হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সেটি নিয়েই ভাবতে হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে।

এসএইচ