তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বসবাস করছিলেন ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের বাড়িতে। আজ আসরের নামাজ শেষে গুরুই গ্রামের শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। পিতার নাম সোনাফর মিয়া, মাতার নাম দুঃখী বিবি। স্বামী কিতাব আলী মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা যান। নিঃসন্তান সখিনার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয়—তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছিলেন না শুধু কাঁধে অস্ত্রধারী যোদ্ধা, ছিলেন খবরদাতা, রান্নার দায়িত্বে থাকা ক্যাম্পের কর্মী আবার ছিলেন হঠাৎই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠা এক আগুনমুখো নারী।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার প্রাণপ্রিয় ভাগ্নে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। সেই শোক তাকে করে তোলে আরো দৃঢ়, আরো প্রতিশোধপরায়ণ। তিনি রাঁধুনির ছদ্মবেশে পাকবাহিনীর গতিবিধির খবর পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। একসময় ধরা পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। তবে স্ববুদ্ধিতে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন একখানা ধারালো দা।
সেই দা দিয়েই কুপিয়ে হত্যা করেন পাঁচ রাজাকারকে। ঘটনাটি এখন কেবল গল্প নয়, ইতিহাস—তার ব্যবহৃত দা বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
হিলচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিয়াজ মামনুন রহমান পুটন জানান, সখিনা খালা আমাদের বাড়ির পাশে থাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার মুখে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর ভয়াবহতা। তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনো বড় কিছু করা হয়নি।
গুরুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া বলেন, 'যিনি আমাদের গর্ব, সেই সখিনা বেগম নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। রাষ্ট্র তাকে যথাযথভাবে সম্মান দিতে পারেনি।'
নীরবে নিভৃতে চলে গেলেন এক নারী যোদ্ধা—যিনি একাত্তরে নিজের হাতে কুপিয়ে মাটি শুদ্ধ করেছিলেন পাঁচ রাজাকারের রক্তে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকলেও জীবনের শেষপ্রান্তে নিঃসঙ্গতা ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। সখিনা বেগম শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা নন, ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি—যাঁকে নতুন প্রজন্মের জানার দরকার বলে মনে করেন এলাকাবাসী।