জীবনের প্রায় ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে খুঁড়ে গেছেন তিন হাজারেরও বেশি কবর। এই মহান কাজে তিনি নেননি কোনো অর্থ, স্বীকৃতি কিংবা খ্যাতির মোহ। শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টি ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য।
স্থানীয় মানুষ তাকে ডাকত ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। কারও মৃত্যুসংবাদ পেলেই তিনি ছুটে যেতেন মৃতের বাড়িতে। একসময় দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন একটি ঘোড়া, যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারেন জানাজার স্থানে। সেই ঘোড়া হয়ে উঠেছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু কিছুদিন আগে হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় থাকাকালীন দুর্বৃত্তরা হত্যা করে তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এই মানবিক মানুষটি।
ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর জানান, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মত স্বাভাবিক হননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন বিরল মানবিক মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের শূন্যতা কখনো পূরণ হয় না।
স্থানীয়দের ভাষায়, মনু মিয়া ছিলেন কেবল একজন কবর খননকারী নন, ছিলেন একজন ‘জীবন্ত সাধু’। জীবদ্দশায় যেমন ছিলেন শত সহস্র মৃত মানুষের শেষ সঙ্গী, মৃত্যুর পরও থাকবেন হাজারো মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় বেঁচে।
আজ জানাজা শেষে জয়সিদ্ধি এলাকার কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হবেন 'শেষ ঠিকানার কারিগর' মনু মিয়া।