বগুড়ায় কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শতাধিক শিক্ষক

ক্লাস শেষ হতেই শিক্ষার্থীদের ছুটতে হয়  কোচিং সেন্টারে
এখন জনপদে
0

ফলাফলের প্রতিযোগিতায় গত কয়েক বছরে এগিয়ে আছে বগুড়া শহরের শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। এ সুযোগে শিক্ষা বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণির শিক্ষক। কলেজের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে লিফলেট, পোস্টার লাগিয়ে চেষ্টা চলছে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারমুখী করার। বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা, কালিতলা, জহুরুল নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার। শুধু জলেশ্বরীতলাতেই প্রাইভেট প্রোগ্রাম ও কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত রয়েছেন শতাধিক শিক্ষক।

ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির স্বপ্ন আর পরীক্ষায় ভালো ফল করে বাবা-মাকে খুশি করার তাগিদ, এই দুইয়ের চাপে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করছেন শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজ শেষে সময় নেই একটুখানি বিশ্রামেরও। ক্লাস শেষ হতেই ছুটতে হয় প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে।

বিকেলের খেলাধুলার সময়টাও চলে যায় কোচিংয়ের বেঞ্চে বসে। অভিভাবকরাও বলছেন, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এই ভয়ে খেলার মাঠ ছেড়ে পড়ার টেবিলে বসানো হয় সন্তানকে।

এক শিক্ষার্থী জানান, আমার তিনটা টিউশন থাকে। এগুলো শেষ করতে রাত ৮ টা বেজে যায়। আরেক শিক্ষার্থী জানান, স্কুলে যদি ভালোমতো পড়াশোনা হতো তাহলে আমাদের কোচিং এ আসতে হতো না। অভিভাবকরা জানান, প্রতিযোগিতার মধ্যে সামনে যাওয়ার জন্য তো প্রস্তুতি দরকার। এজন্য বাচ্চাদের খেলার সময়টা সাইডে রেখে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে বাচ্চাদের প্রস্তুত করার জন্য।

অনেকের অভিযোগ আছে স্কুল-কলেজের নিয়মিত পাঠদানে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষকরাই খুলে বসেছেন টিউশন সেন্টার। নিজের নাম, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেও চলছে এই বাণিজ্য। কোচিংয়ে শিক্ষকদের দাবি, কলেজের ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম।

কোচিংয়ে শিক্ষকরা জানান, শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী না হয়ে কোচিংমুখী হচ্ছে। এখানে অবশ্যই স্কুলের সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। দুই একজন শিক্ষকের হয়ত ক্লাস খারাপ হয়, এতে করে শিক্ষার্থীরা ভাবে তাদের বাইরে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করা উচিত। যে সময় পাওয়া যায় ক্লাসরুমে তাতে সিলেবাস শেষ হয় না, এতে করে অবকাঠামো, জনবল এবং সময় সকল দিক সমন্বয় করতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য জয়ে কোচিং বা প্রাইভেটের দিকে ঝুঁকছে।

এই অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ আর বিশ্রামের ঘাটতিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। এমন প্রতিযোগিতা আর কড়া নিয়মের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা সামাজিকতা ও নৈতিকতার শিক্ষা পাচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তারা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের অবশ্যই এক্সট্রা কারিকুলামে যুক্ত করতে হবে। নাহলে তাদের মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসবে। তারা পারিপার্শ্বিক কোন কারিকুলামে অভ্যস্ত হচ্ছে না। আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না। কারণ নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তারা শুধু প্রতিযোগিতা শিখছে। যে প্রতিযোগিতা থেকে তাদের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন হবে বলে তারা মনে করছে।

জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষের চেয়ে প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে বেশি মনোযোগী। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস শিক্ষা অফিসারের।

বগুড়া জেলার শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দ বলেন, ‘শিক্ষকের দায়িত্ব পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সাথে ক্লাসে পাঠদান করবেন, সময়মত ক্লাসে যাবেন, সন্তানকে সুশিক্ষা দান করবেন। আমি অনুরোধ করবো যারা এখনো কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত তারা এটা থেকে সরে আসেন, নাহয় পরবর্তীতে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ইএ