উন্নয়নের নামে লুট হচ্ছে সুরমার মাটি, হুমকিতে জনপদ

সুনামগঞ্জ
অপরাধ
এখন জনপদে
0

সুনামগঞ্জে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুট হচ্ছে সুরমা নদীর মাটি। দিনরাত ড্রেজিংয়ে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষিজমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, তেমনি গ্রামরক্ষায় প্রতিবাদ করলেই দেয়া হচ্ছে মামলার হুমকি।

সাড়ে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সুনামগঞ্জ। তবে জেলার বাসিন্দাদের শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়েছে সরকারি প্রকল্পের নামে রাতভর চলা ড্রেজিং মেশিন।

মূলত দেশের ১৩টি জেলায় সারের বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ ডক ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জলিলপুর ও ব্রাহ্মণগাঁও মৌজায় সুরমা নদীর চর থেকে সাত লাখ ঘনফুট বালু ও মাটি উত্তোলনের অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বিষয়টি তদারকির জন্য সহকারী ভূমি কমিশনার, প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত বালি উত্তোলন নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসককে রিপোর্ট করার কথা রয়েছে। যদিও, বাস্তবচিত্র একেবারেই ভিন্ন।

প্রকল্পের কাগজ দেখিয়ে বালি মাটি উত্তোলন করে নৌকায় লোড করা হচ্ছে। ফলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে পাঁচ নৌকাভর্তি মাটি প্রকল্পে যাওয়ার কথা থাকলেও যাচ্ছে দুই থেকে তিনটি। বাকি উত্তোলিত বালি মাটি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছে স্থানীয় ঠিকাদার।

প্রতিদিন রাতভর চলে ড্রেজার, যা প্রকল্প অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন। স্থানীয় ঠিকাদার এক মাসেই প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে ড্রেজারের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। প্রতিবাদ করলেই মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় যুবদল নেতা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে।

এদিকে প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন না করতে সাংবাদিককে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাবও দেন ওই ঠিকাদার।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই কমবেশ আছি। ওসব বাদ দাও। তোমার জন্য কটা গিফট দিবোনি। ১০ দিন পর পর একটা কিছু দিবোনি।’

প্রকল্প নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানান, ড্রেজার মেশিনের সমস্যার কথা বলে সাইটে নিয়মিত মাটি না ফেলার অভিযোগ করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা।

বাংলাদেশ ডক ইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের স্টোর কিপার আক্কাছুল হাবিব বলেন, ‘মেশিনের সমস্যা, যেরকম লোডিং ড্রেজারের সমস্যা, তারপর আনলেডিং ড্রেজারের সমস্যা। তারপর যে চর দেখাইয়ছে সে চরের বালুতে সমস্যা। রাতে যেটা লোড হয়ে আসে, এখানে যদি থাকে নৌকা আনলোড করতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নেয় ওরা। সেক্ষেত্রে হয়তো সন্ধ্যা হয়ে যায়।’

তবে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রকল্পের নামে কেউ অনিয়ম করলে এবং তার সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা জেরিন বলেন, ‘রাতে ড্রেজার চলার আসলে কোনো নিয়ম নেই। যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় যে রাতে ড্রেজার চলছে যেটা সময়ের বাইরে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেটা বন্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

গেল ২২ মে থেকে প্রকল্পের নামে সুরমা নদীতে দিনরাত ড্রেজার চললেও এক মাসে সরকারি প্রকল্পে মাটি পড়েছে প্রায় দুই লাখ ৮৩ হাজার ঘনফুট।

এসএস