মশক নিধনে বাজেট বাড়লেও নেই কার্যকারিতা; উত্তর সিটিতে ডেঙ্গুর দাপট বাড়ছেই

ডিএনসিসির মশক নিধন কর্মসূচী
স্বাস্থ্য
এখন জনপদে
0

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিলো ৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই বাজেট ছিলো ১১০ কোটি টাকা। মশক নিধনে বাজেটের আকার বাড়লেও মশার শক্তি কমেনি বরং বেড়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশক নিধনে ২৩ কোটি টাকা বাজেট বেশি ছিলো ঢাকা উত্তর সিটির। কিন্তু তবুও প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু। মশক নিধনে যে রাসায়নিক দেয়া হয় তা কি ঠিকমত ছিটানো হয় সব এলকায়? মাঠ পর্যায়ে দেখা গেলো, সবকিছুতেই শুধু ফাঁকি আর ফাঁকি।

বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রবও বাড়ছে রাজধানীতে। প্রশ্ন হলো, কেনো এমনটা হচ্ছে? এখানেই শেষ নয়, জনমনে প্রশ্ন আরও অনেকগুলো। বছর বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে বাজেট দেয় তার কতটা মশা নিধনে কাজে আসে? মশার কীটনাশক গুনগত মান নিয়ে কেনো বারবার প্রশ্ন তৈরি হয়? প্রতিদিন মশার যে কীটনাশক ছিটানো হয় তা কতটা কার্যকর? রোজ রোজ কি পুরো রাসায়নিক ছিটানো হয় সব এলাকায়?

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এডাল্টিসাইডিং বা পূর্ণাঙ্গ মশক নিধন কার্যক্রম চলে। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, তেজগাঁও এর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড অফিস থেকে মশক কর্মীরা বের হলেন ৫টা বাজার ৫ মিনিট আগে। ৫টা থেকে দুজন কর্মী মশার কীটনাশক দেয়া শুরু করে তেজগাঁও এর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে মিনিট ১৫ স্প্রে করে তারা চলে যায় চা খেতে। চা খেয়ে যাওয়ার পথে তারা আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৫টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত মোটে ৩ মিনিট কীটনাশক স্প্রে করে। অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে ১৮ থেকে ২০ মিনিট সময় ছিটানো হয় কীটনাশক। অথচ একটি মেশিনে যে পরিমাণ কীটনাশক থাকে তাতে টানা প্রায় এক ঘণ্টা স্প্রে করা সম্ভব।

মশক কর্মীরা বলেন, ‘একটানা কাজ করলে আমরা এক ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারি। আমরা ৮টা বাজে বের হয়ে যাই, বেলা ১১:৪৫ এ হাজিরা দিই, তারপর আবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাজিরা দিয়ে বের হয়ে যাই। একটা এলাকা কাভার করে চলে আসি।’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ৬টার আগেই সবগুলো কীটনাশক ছিটানোর মেশিন জমা দেয়া হয়েছে ওয়ার্ড অফিসে। অর্থাৎ বাকিরাও কাজে ফাঁকি দিয়েছে। কীটনাশক ছিটানো কর্মীদের মশক সুপারভাইজারের কথা জিজ্ঞেস করলে দুই মশক কর্মী জানায়, সুপারভাইজার মাঠে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করছেন।

মশক কর্মীরা বলেন, সুপারভাইজার হাজিরা দিয়ে মাঠে কার্যক্রম তদারকি করতে গিয়েছেন।

কর্মীদের কথা যাচাই করতে সুপারভাইজারকে ফোন করলে তিনি জানালেন, তিনি নিজ এলাকা টঙ্গীতে তার বাড়ির কাছে আছেন। মশক সুপারভাইজার জানান, তিনি ছুটি নিয়ে নিজের এলাকায় গিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে মশক নিধনে এমন চিত্র চললেও ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার গৎবাঁধা কথার বাইরে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করলেন না।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্লানিং করা আছে। প্লানিং অনুযায়ী একেকদিন একেকজনের কাজ ভাগ করে দেয়া আছে। যদি কারো কাজে গাফিলতি থাকে, আমাদের অফিসাররা থাকে ফিল্ড পর্যায়ে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের মোটিভেট করা হয়।’

এদিকে, মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তাদের খুব একটা অন্তর্ভুক্ত করা হয় না মশক নিধন কার্যক্রমে। এছাড়া নতুন করে বিটিআই আমদানির কথা হলেও সে বিষয়ে জানেন না বিশেষজ্ঞরা।

কীটতত্ত্ববিদ ডা. মোহাম্মদ গোলাম ছারোয়ার বলেন, ‘আমরা এতগুলো ওষুধ দিয়ে এসেছি তাহলে মশাগুলো মারা যাচ্ছে না কেন, দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে কেন এটা বের করাই মূলত বিশেষজ্ঞ টিমের কাজ। এবং এ কাজটা করতে গিয়ে আমাদের যে ধরনের সাপোর্ট দরকার তা দিলেই তো আমরা কাজটা করবো। কিন্তু কিছু কিছু সিদ্ধান্তে আমাদের উপস্থিতিই থাকে না। আমার মনে হয় প্রতিটা জায়গায় বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শক্রমে আমাদের সবগুলো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

দিন দিন রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তবে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে তাদের করণীয় অনেকটাই কম বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

ইএ